আফগানিস্তানে মার্কিন অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘোষণা

সময় ট্রিবিউন | ৩১ আগষ্ট ২০২১, ১৯:২৮

ছবি: ইন্টারনেট

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। নিউ ইয়র্কে তখন সকালের স্বচ্ছ রোদে প্রাণচাঞ্চল্য। সকাল ৮টা ৪৬ এর দিকে আকস্মিক সবদিকে ছড়িয়ে পড়লো আতঙ্ক। টুইন টাওয়ারের দিকে ছুটে এলে একটি ছিনতাই হওয়া বিমান; আঘাত হানলো।

কিছুক্ষণের মধ্যে আরও একটি বিমান আঘাত হানলো। নজিরবিহীন। পাখির মতো উড়তে উড়তে টুইন টাওয়ারের উপর থেকে পড়তে থাকেন একের পর এক মার্কিনি। পরে জানা গেলো, এটি ছিল একটি জঙ্গি হামলা, যা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ২ হাজার ৯৯৬ জনের।

এরপরই এ হামলায় দায়ে ওসামা বিন লাদেনের জঙ্গি গোষ্ঠি আল কায়েদাকে হণ্য হয়ে খুঁজতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তখন আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ছিল তালেবান। তাদের বিরুদ্ধে আল কায়েদাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ উঠলো।

তখন আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হস্তান্তরের জন্য তালেবানকে চাপ প্রয়োগ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তালেবান তাকে হস্তান্তরে অসম্মতি জানালে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী ও ন্যাটোর বিমান হামলা শুরু হয়। ২০০১ সালের নভেম্বরে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় মার্কিনিরা।

এভাবেই শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান অভিযান, যা আজ (৩১ আগস্ট) শেষ হলো। ২০ বছর আগে যে তালেবানের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, সেই তালেবানই আফগানিস্তানে আবার ক্ষমতায় ফিরলো।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মধ্যরাতে আফগানিস্তান ছাড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ সামরিক বিমান। ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জি জানান, মধ্যরাতের পর আফগানিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে সর্বশেষ সি-১৭ বিমান কাবুল ছেড়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে যারা এখনো কাবুল ত্যাগ করতে পারেননি, তাদের সহায়তা করার কূটনৈতিক মিশনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। বিবিসির খবরে বলা হয়, এ বিমানের কাবুল ত্যাগ করার পর পরই তালেবানদের বিজয়সূচক গুলির আওয়াজ শোনা যায়।

গত ১৪ই আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল তালেবান। সেই সময় থেকেই মূলত কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার কার্যক্রম চলছিল।

জেনারেল ম্যাকেঞ্জি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এবং জোট বাহিনীর বিমানগুলোয় করে সব মিলিয়ে এক লাখ ২৩ হাজার বেসামরিক ব্যক্তিকে সরিয়ে আনা হয়েছে। প্রতিদিন সাড়ে সাত হাজারের বেশি বাসিন্দা কাবুল ছাড়ার সুযোগ পেয়েছেন।

এ ঘোষণা দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন ওয়াশিংটনে বলেছেন, এটি ছিল ‘ব্যাপক সামরিক, কূটনৈতিক এবং মানবিক কর্মযজ্ঞ’ এবং যা যুক্তরাষ্ট্র অনেক চ্যালেঞ্জের সাথে বাস্তবায়ন করেছে। তিনি বলেন, ‘নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হলো।’ ব্লিনকেন বলেন, ‘সামরিক মিশন সমাপ্ত হয়ে নতুন এক কূটনৈতিক মিশন শুরু হল।’

তিনি বলেন, তালেবানকে বৈধতা অর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে কিনা এবং নাগরিকদের ভ্রমণে স্বাধীনতা দেয়া, নারীদের অধিকার রক্ষা এবং সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দমন করছে কিনা - এসব বিষয় বিশ্ববাসীর নজরে থাকবে।

তিনি জানিয়েছেন, কাবুলে কূটনৈতিক মিশন স্থগিত করে দোহায় নিয়ে যাওয়া হলেও মার্কিনি এবং যে আফগানদের যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট রয়েছে, তারা চাইলে তাদের আফগানিস্তান ছাড়তে সহায়তা করা হবে। গত ১৭ দিন ধরে চলা এ উদ্ধার অভিযানে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: