কি দিয়ে তৈরি চীনের মহাপ্রাচীর

সময় ট্রিবিউন | ১৩ এপ্রিল ২০২১, ০৩:১২

ছবিঃ ইন্টারনেট

বিশালাকার দীর্ঘ প্রাচীর। যার নাম চীনের মহাপ্রাচীর। বিশ্বব্যাপী পর্যটকরা অধীর আগ্রহ নিয়ে চীনের মহাপ্রাচীর দেখতে যান। পাথর ও মাটি দিয়ে তৈরি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সুউচ্চ প্রাচীরের সারি। আকাশ থেকে দেখলে মনে হয়, বিশালাকার এক সাপ বোধ হয় এঁকেবেঁকে চলেছে। পাহাড় ও সবুজ বনভূমির উপরে বিস্তৃত ২১ হাজার ১৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ চীনের গ্রেট ওয়াল। এ প্রাচীরের যেটুকু প্রস্থ; সেখানে না-কি প্রায় ১২ জোড়া ঘোড়া একসঙ্গে দৌঁড়াতে পারবে। বসন্তকালে দেওয়ালের গায়ের সবুজ লতা-পাতা তাদের প্রাণ ফিরে যায়। অ্যাডভেঞ্চার প্রেমিকদের কাছে চীনের মহাপ্রাচীর হতে পারে আদর্শ এক স্থান।

জানা যায়, চীনের মহাপ্রাচীর খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে খ্রিষ্টীয় ১৬শ শতক পর্যন্ত চীনের উত্তর সীমান্ত রক্ষা করার জন্য তৈরি হয়। তখন এরকম অনেকগুলো প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল। তবে ২২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে, চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াংয়ের অধীনে নির্মিত প্রাচীরটিই বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত। বর্তমানে প্রাচীরটি মিং রাজবংশের শাসনামলে নির্মিত হয়। চীনের মহাপ্রাচীর মানুষের হাতে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্থাপত্য। এ প্রাচীর প্রায় ৫ থেকে ৮ মিটার উঁচু এবং ৬ হাজার ২৬০ কিলোমিটার লম্বা। এটি শুরু হয়েছে সাংহাই পাস থেকে এবং শেষ হয়েছে লোপনুর নামক স্থানে। এর মূল অংশের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ২০৮ সালের দিকে।

নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন চৈনিক বা চাইনিজরা, কিং সাম্রাজ্যের সময়। চীনের প্রথম সম্রাট কিং সি হুয়াং এটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন এবং শত্রুর হাত থেকে নিজের সম্রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য। চীনের মহাপ্রাচীরটি না-কি চাঁদ থেকেও দেখা যায়, বলে জনশ্রুতি আছে। তবে এটি মিথ্যা তথ্য বলে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন। কয়েকজন নভোচারী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকেও এটি দেখতে পাওয়ার দাবি করেছেন। যেদিক থেকেই বিবেচনা করা হোক না কেন, বিশ্বের অবাক করা স্থাপনায় উপরের দিকে থাকবে চীনের মহাপ্রাচীর। চীনের মহাপ্রাচীরের কথা সবাই জানলেও এটি তৈরি করতে কী ব্যবহৃত হয়েছিল, তা অনেকেরই অজানা। মানব নির্মিত বিশালাকার এ প্রাচীরটি তৈরি করতে কংক্রিটের মিশ্রণে আঠালো ভাত ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানা যায়।

অ্যাকাউন্টস অব কেমিকেল রিসার্চ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে, জল প্রতিরোধী এবং সময়ের সাথে সাথে এর আকার ধারণ করার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে, গবেষণা অনুসারে, স্টিকি রাইস স্থপনা নির্মাণের সময় ব্যবহার করা হলে, তা জলরোধী ও ভূমিকম্প থেকে রক্ষা পায়। চালে থাকা অ্যামাইলোপেকটিন চুনের ক্যালসিয়াম কার্বনেটে যুক্ত করার ফলে, ক্যালসিয়াম কার্বনেট স্ফটিক পাওয়া যায়। এতে স্থাপনাগুলো আরও মজবুত হয়। ১৫০০ বছর আগে চীনের বিভিন্ন মন্দির, প্যাগোডা, প্রাচীরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে কংক্রিটের মধ্যে আঠালো ভাতের ব্যবহার চালু ছিল বলে ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের মত। এ কারণেই ঐতিহাসিক সব স্থাপনাগুলো এখনো অক্ষত আছে বলে মনে করা হয়।

চীনের মহাপ্রাচীরটিতে পর্যবেক্ষণ চৌকি আছে। যা অস্ত্র সংরক্ষণ, সেনাবাহিনীর আবাসন এবং আগুনের সংকেত প্রদানের কাজে ব্যবহৃত হত। সেনাঘাটি এবং প্রশাসনিক কেন্দ্রসমূহ দীর্ঘ বিরতিতে অবস্থিত। চীনের গ্রেট ওয়ালের সীমানার মধ্যে সেনা ইউনিটগুলোর যোগাযোগ যেমন- দলকে শক্তিশালী করা এবং শত্রুদের আন্দোলন সম্পর্কে সাবধান থাকা ছিল উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে দেয়ালের কিছু অংশ বিভিন্ন নাশকতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেয়াল পূণঃনির্মাণের জন্য কিছু অংশ ধ্বংস করা হয়েছে। তবে কোনো পূর্ণাঙ্গ জরিপ না থাকায়, কতটুকু স্থান রক্ষা পেয়েছে সে তথ্য কারো জানা নেই। তবে ধারণা করা হয়, চীনের মহাপ্রাচীরের ৩০ শতাংশ হারিয়ে গেছে। চুরি করে এর ইট দিয়ে বাড়ি বানানোর কারণেই ঐতিহাসিক এ প্রাচীর বিলীন হওয়ার পথে।

চীনা ভাষা খোদাই করা একেকটি ইট বিক্রি হয়েছে প্রায় ৫ ডলার বা ৩০ ইউয়ান। চীনের এ মহাপ্রাচীর দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা ভিড় জমায়। সেখানে গরমের সময় খুবই গরম আর শীতকালে প্রচণ্ড ঠান্ডা আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। আর এ সময়গুলোতেই পর্যটকরা সেখানে ভিড় জমান। অবশ্যই চীনের গ্রেট ওয়াল পর্যবেক্ষণের সময় সঙ্গে অভিজ্ঞ গাইড রাখতে হবে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে/ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: