জানুয়ারিতে ভারত যখন ভুটানকে শুভেচ্ছাস্বরূপ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উপহার দেয়, প্রতিবেশী দেশটি তখন এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নেয়। দেশের ৮০ লাখ জনগণকে দ্রুত ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করার বদলে সরকার ঝুং দ্রাতশাং নামে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের একটি গোষ্ঠীর কাছে পরামর্শ চায়। ভিক্ষুরা জানান, সেসময় আকাশের তারা শুভ অবস্থানে ছিল না। তাই দুই মাস অপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত হয়, কেবল বানর বছরে জন্ম নেয়া একজন নারীর দ্বারা বানর বছরে জন্ম নেয়া কোনো নারীকেই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়া হবে।
তাই ভুটান মার্চ ২৭ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করে এবং শেরিং জ্যাংমো, নিন্দা দেমাকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগ করেন। প্রার্থনা সম্পন্ন করে ও মাখন নিয়ে প্রদীপ জ্বালানোর পর শুভক্ষণে সকাল ৯:৩০ মিনিটে তাকে থিম্পুর একটি স্কুলে ইনজেকশন দেয়া হয়। কিন্তু তারপর আর কোনো দেরি নয়। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ভুটানের ৮৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ককে ভ্যাকসিনের প্রথম শট দেয়া হয়, যা ভ্যাকসিন প্রদানের হারে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি।
ভ্যাকসিন দেয়ার হারে মাত্র দু’টি দেশ ভুটানকে কিছুটা ছাড়িয়ে যেতে পেরেছে- ইসরায়েল ও সিসেলস, কিন্তু তাদের এক্ষেত্রে কয়েক মাস সময় লেগেছিল। এই সাফল্যের ভাগীদার শুধু ভুটানের জ্যোতির্বিদরাই নন, বরং দেশটির রাজনৈতিক নেতারাও। ‘ড্রাগন কিং’ নামে পরিচিত ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ‘শান্তির প্রহরী’ নামে কমলা জাম্পস্যুট পরিহিত একটি জাতীয় বাহিনী গঠন করেন। এই বাহিনী সারা দেশ জুড়ে ১ হাজার ২০০টি ভ্যাকসিন প্রয়োগ কেন্দ্র স্থাপন ও কর্মী নিয়োগে সহায়তা করে।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং নিজে একজন চিকিৎসক এবং দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডেচেন ওয়াংমো যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কার্ডিওলজি ও এপিডেমিওলজিতে ডিগ্রি নিয়েছেন। জনস্বাস্থ্যের প্রতি জোর দেয়া নীতির ওপর ভিত্তি করে ২০১৮ সালে নির্বাচিত তাদের সরকার করোনা মহামারিতে সক্রিয়ভাবে সাড়া দিয়েছে। কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম বেশ কঠোরভাবে পালন করা হয়েছে। মার্চে দক্ষিণাঞ্চলের প্রদেশ সফর শেষে রাজধানী থিম্পুতে ফিরে স্বয়ং রাজা নিজেকে এক সপ্তাহের বাধ্যতামূলক আইসোলেশনে রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে ২১ দিনের আইসোলেশনে থেকেছেন।
প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের ফেসবুক পেজ জনগণকে করোনাভাইরাসের তথ্য জানাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। পেজে ব্যাখ্যা করা হয় যে, যেহেতু ভ্যাকসিন সংরক্ষণ ও সরবরাহের কাজটি জটিল ও কিছু মানুষ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভোগেন এবং প্রত্যেকেরই দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে, তাই ভ্যাকসিনের ব্যাপারে জনগণের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে এটিকে একটি প্রাণবন্ত জাতীয় কর্মসূচিতে রূপান্তর করা উচিত। কঠোর সময়সূচির আরও একটি কারণ ছিল।
ভারত ভুটানের দীর্ঘদিনের শুভাকাঙ্খী, কিন্তু এই ক্ষুদ্র বন্ধু রাষ্ট্রটিকে ভারত একসঙ্গে সব ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারেনি। পর্যাপ্ত পরিমাণ ডোজের জন্য অপেক্ষা করার ফলে ভুটানিরা সীমিতভাবে ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়টি এড়াতে পেরেছিল। সবাইকে দ্রুত ভ্যাকসিন দিয়ে ভুটান নতুন ডোজ পাঠানোর জন্য ভারতের ওপর মৃদু চাপও প্রয়োগ করে।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: