যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়ার ৫০ এরও বেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন করে আবার নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের দ্বিতীয় বর্ষ পূর্তির দুই দিন আগে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। এর আগে রাশিয়ায় পুতিনবিরোধী নেতা নাভালনির মৃত্যু ইস্যুতে ছয় রুশ কারা কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অস্ত্রভান্ডার ও যুদ্ধ তহবিল শেষ করতে চাইছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। রুশ অর্থনীতিতে আঘাত হানার লক্ষ্যে সমন্বিত পশ্চিমা প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য-ঘোষিত নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার গোলাবারুদশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে নিশানা করা হয়েছে। এ ছাড়া ধাতু, হিরা এবং জ্বালানিশিল্পে রাজস্বের উৎসগুলোকে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে ক্যামেরন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চাপের (নিষেধাজ্ঞা) অর্থ হলো রাশিয়া এই অবৈধ আগ্রাসন চালিয়ে নিতে সক্ষম হবে না।’
অন্যদিকে, রাশিয়ার পাঁচ শতাধিক লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নাভালনির স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, শুক্রবার রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দেবে দেশটি। পাঁচ শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী অর্থমন্ত্রী ওয়ালি আডিয়েমো জানিয়েছেন, এ নিষেধাজ্ঞায় অন্য দেশে রাশিয়ার সামরিকশিল্প ও কোম্পানিগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া এ নিষেধাজ্ঞায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও শামিল হচ্ছে।
আডিয়েমো বলেন, নিষেধাজ্ঞাটির মূল লক্ষ্য হবে রাশিয়ার সামরিক প্রতিষ্ঠান ও তৃতীয় বিশ্বের যেসব দেশ রাশিয়ারকে চাহিদামতো পণ্য প্রবেশের সুবিধা দেয় তারা। এছাড়া বিরোধী দলের নেতা আলেক্সি নাভালনির মৃত্যুর ব্যাপারে রাশিয়াকে জবাবদিহি করাতে চায় দেশটি।
নিষেধাজ্ঞা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ রাশিয়াকে চাপে ফেলবে। এর ফলে প্রয়োজনীয় পণ্যের অভাবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আডিয়েমো বলেন, রাশিয়ার লাগাম টানতে নিষেধাজ্ঞা ও রপ্তানিকে নিয়ন্ত্রণে জোরদার করা হচ্ছে। কেননা ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা কঠিনতর বিষয়। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মস্কোর হামলা থামাতে নিষেধাজ্ঞা যথেষ্ট নয়।
এর আগে বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরেকটি নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দিয়েছে। এর আওতায় প্রায় ২০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে মস্কোর অস্ত্র কেনাবেচা ও ইউক্রেনের শিশুদের অপহরণের অভিযোগ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। এরপর থেকে পরবর্তী দুই বছর ধরে চলা ইউক্রেনের যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত ও দেশটির বহু শহর ধ্বংস হয়েছে। এ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মস্কোর বিরুদ্ধে কয়েক হাজার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ওয়াশিংটন। এই চাপ ধরে রাখতেই যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্ররা নতুন এসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: