ফ্রান্সে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ক্ষুব্দ কৃষকেরা দেশটির রাজধানী প্যারিসের কাছে এসে গেছেন। বেলজিয়াম থেকে আসা সবজি রাস্তায় ফেলে অবরোধ করেছেন ফ্রান্সের কৃষকেরা। সড়কে ছড়িয়ে আছে সেই সব সবজি। সরকারি বাড়িতে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে সার। সারি সারি ট্রাক্টরও দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ফ্রান্সের বড় শহরগুলোর বাইরে এমন কৃষক বিক্ষোভের দৃশ্য দেখা মিলছে। জানা গেছে, সস্তায় জিনিস আমদানি, চাষের খরচ সমানে বেড়ে যাওয়া ও সরকারি লাল ফিতের দাপটের এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভে নেমেছেন দেশটির কৃষকেরা।
মার্সেই ও লিয়ঁর মধ্যে সংযোগকারী এ৭ হাইওয়েতে দেখা যায়, সেখানে ছড়িয়ে আছে টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি। কৃষকদের অভিযোগ, এই সবজিগুলোই প্রতিবেশী দেশ থেকে কম দামে আমদানি করা হচ্ছে।
প্যারিসের কাছে সবচেয়ে ব্যস্ত সময়ে ট্রাক্টরগুলো সড়ক দিয়ে ধীরে ধীরে চলছিল। বিএফএম টিভিকে এক কৃষক জানিয়েছেন, তারা ধীরে ধীরে প্যারিসের খুব কাছে এসে গেছেন।
গত বুধবার রাতে কৃষকদের শক্তিশালী সংগঠন এফএনএসইএ সরকারের হাতে তাদের একশটি দাবি তুলে দিয়েছে। তারা কৃষিক্ষেত্রের আরও সুরক্ষা চেয়েছেন। তাদের দাবি, বিদেশ থেকে সস্তায় সবজি এনে তাদের অন্য়ায় প্রতিযোগিতার মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। আর আমলাতন্ত্র তাদের ওপর অনেক বেশি বোঝা চাপাচ্ছে।
ফ্রান্সে কৃষকদের এই ইউনিয়ন খুবই প্রভাবশালী। তারা দাবি করেছে, কৃষকদের ট্রাক্টর ও গাড়ির ক্ষেত্রে ডিজেলে ছাড় দিতে হবে। অবিলম্বে ইইউয়ের দেওয়া কৃষি ভর্তুকি তাদের হাতে তুলে দিতে হবে, বিমার অর্থ দেওয়ার গ্যারান্টি দিতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতি হলে তা পূরণ করতে হবে।
কৃষকদের এই বিক্ষোভ এখন দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত থেকে তা শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগেই জার্মানির কৃষকরাও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। ফ্রান্সের এই কৃষক বিক্ষোভের মোকাবিলা করা এখন সরকারের সামনে বড় চ্য়ালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।
নতুন প্রধানমন্ত্রীকে প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ দুই সপ্তাহ আগে নিয়োগ করেছেন। মাক্রোঁর আশা, প্রশাসনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনি। বৃহস্পতিবার অর্থ, পরিবেশ ও কৃষিমন্ত্রীরা আলোচনায় বসেছিলেন। তারা আজ শুক্রবারের মধ্যে কৃষকদের বিষয়ে একটা ঘোষণা করতে চান। তিন মন্ত্রী কৃষকদের সমস্যা, বিশেষ করে ডিজেল নিয়ে এবং পশুপালন ও কৃষিজ জিনিসের ন্যায্য দাম নিয়ে কথা বলেছেন। ফ্রান্সের সরকার একটি কৃষি আইন আনতে চাইচিল। আপাতত সেটা বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, তারা আগে কিছু ব্যবস্থা নিতে চায়। তারপর ওই আইন করা হবে।
এদিকে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচন আসছে। এই অবস্থায় কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে চিন্তিত মাক্রোঁ। কারণ, অতি দক্ষিণপন্থিরা এই বিক্ষোভকে হাতিয়ার করতে পারে। তাদের অভিয়োগ, সরকার ইইউয়ের কৃষক-বিরোধী নিয়ম সমর্থন করছে। আর এই নিয়মগুলো সব দেশকে অনুসরণ করতেই হবে।
অতি-দক্ষিণপন্থি নেতা লে পেন বলেছেন, মাক্রোঁ কৃষকদের কাঁধে হাত রেখে কথা বলেন, তারপর ছুরি দিয়ে তাদের পিঠে মারেন। কৃষকরাই সরকারের সবচেয়ে বড় শত্রু।
কৃষক ইউনিয়নের এক নেত্রী জানিয়েছেন, মানুষকে ভালো খাবার খেতে হলে উপযুক্ত দাম দিতে হবে। তার দাবি, চাষ করে কৃষকরা আর নিজেদের অন্নসংস্থান করতে পারছেন না। তাই তারা হতাশ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: