নারদা মামলায় তৃণমূল কংগ্রেসের চার নেতা গতকাল সোমবারও জামিন পাননি। স্থগিত করা হয়েছে শুনানি। আগামীকাল বুধবার ফের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এদিকে কলকাতার নিম্ন আদালতে জামিনের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সিবিআইয়ের আবেদন খারিজ করেছে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রি।
তারা জানিয়েছে, ঐ আবেদন একাধিক ত্রুটিযুক্ত। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শুনানি স্থগিত রাখার জন্য সিবিআইয়ের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্য বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ। পাশাপাশি এই মামলায় কী এমন পরিস্থিতি হলো যে সাত বছর পর গ্রেফতার, গতকাল সেই প্রশ্ন তুলেছে বেঞ্চটি। ফলে মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আপাতত গৃহবন্দি রইলেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং দুই নেতা মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়।
নারদা কাণ্ডের অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। যে সাংবাদিক এই স্টিং অপারেশন চালিয়েছেন তিনি নিজেই শুভেন্দুকে টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেই অভিযোগ।
গতকাল সকালে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জমা দেয় সিবিআই। তারা তৃণমূলের নেতাদের কলকাতা হাইকোর্টের গৃহবন্দি রাখার নির্দেশের পাশাপাশি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে। একাধিক ত্রুটি থাকায় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রি তা বাতিল করে ফের আবেদনের নির্দেশ দেয়।
এদিকে কলকাতা হাইকোর্টে পাঁচ সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআইয়ের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা এই শুনানি স্থগিত রাখার জন্য আবেদন জানান। তার দাবি, জামিনসংক্রান্ত বিচারপতি অরিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ ও বেঞ্চ গঠনের আবেদনকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এখানে শুধু জামিনের প্রশ্ন নয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও আইনমন্ত্রীর তদন্তে হস্তক্ষেপের বিষয়টিও বিচার্য। এর আগে নিম্ন আদালত জামিনের যা রায় দিয়েছে তা চাপের মুখে নির্দেশ দিতে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী সমর্থক নিয়ে নিজাম প্যালেস ও নিম্ন আদালতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। পালটা বিরোধিতা করে অভিযুক্তদের আইনজীবী অভিযোগ মনু সিংভি বলেন, সেদিনের ঘটনাকে সামনে রেখে সিবিআই আদালতকে ভুল বোঝাচ্ছে।
বৃহত্তর বেঞ্চ সিবিআইয়ের কাছে জানতে চায়, সাত বছর পর তদন্ত শেষে গ্রেফতারের প্রশ্ন এল কেন? সেদিন তাদের পাঠানো একটা ইমেইল অভিযোগপত্রের ওপরে কীভাবে হাইকোর্টে শুনানি হতে পারে? ঐ ইমেইলের কোথাও জামিন খারিজের বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই।
অভিযুক্তদের তরফে কল্যাণ দাবি করেন, এই ধরনের অভিযোগ শুনতে পারে একমাত্র সিঙ্গেল বেঞ্চ। অথচ অভিযুক্তদের কোনো বক্তব্য না শুনেই এবং তাদের অন্ধকারে রেখে জামিন স্থগিত রেখেছে ডিভিশন বেঞ্চ। এমনকি নিম্ন আদালতের নির্দেশ হাতে পাওয়ার আগেই শুনানি হয়ে গেছে।
মনু সিংভি বলেন, ২০১১ সাল থেকে তারা মন্ত্রী। গ্রেফতার করতে প্রয়োজন ছিল স্পিকারের চিঠি। কিন্তু নতুন সরকার গঠনের জন্য গত ৫ মে থেকে ৯ মে (এ সময়ে মুখ্যমন্ত্রী নতুন সরকার গঠনের জন্য পদত্যাগ করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করতে বিধানসভার বৈঠক ডেকেছেন) যে সাংবিধানিক শূন্যতা ছিল তার সুযোগে রাজ্যপালকে দিয়ে সই করিয়ে নিয়েছেন। সব শেষে আদালত সিদ্ধান্ত দেয় বুধবার ফের মামলাটির শুনানি হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: