মিশরের প্রেসিডেন্ট গাজায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে একটি সীমান্ত ক্রসিং খুলে দিতে রাজি হয়েছেন, যেখানে ত্রাণবাহী ২০টি পর্যন্ত ট্রাক যেতে পারবে।
এদিকে, ইসরায়েলের মানুষের সাথে সংহতি জানিয়ে দেশে ফিরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে মধ্যপ্রাচ্যের পথে থাকা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বৃহস্পতিবার সকালেই ইসরায়েলে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
ওদিকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, গাজার হাসপাতালে হামলার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরও বেড়েছে এবং এ পর্যন্ত ৪৭১ জন মারা গেছে।
হাসপাতালে বিস্ফোরণের সাথে নিজের সম্পৃক্ততার খবর প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইসরায়েলের এ অবস্থানকে সমর্থন করেছেন।
যদিও হামাস তাৎক্ষনিকভাবে ওই ঘটনার জন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করেছিলো। তবে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফের অভিযোগ ফিলিস্তিনিদের ছোড়া রকেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ঘটনাটি ঘটেছে।
তবে আরব বিশ্বের অনেক দেশই হামাসের মতো ইসরায়েলকেই ওই হামলার জন্য দোষারোপ করেছে এবং আরব নেতারা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে তাদের বৈঠকও বাতিল করেছেন।
গাজায় টেকসই ত্রাণ করিডোরের ঘোষণা
মিশর গাজায় ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর জন্য রাফাহ ক্রসিং খুলে দিতে সম্মত হয়েছে। এই ক্রসিং দিয়ে ২০টি পর্যন্ত ত্রাণবাহী ট্রাক পাঠানো যাবে। খবর বিবিসি বাংলা'র।
আগেরদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ ঘোষণা দেয়ার পর মিশরের দিক থেকেও সেটি নিশ্চিত করা হয়েছে।
“মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি ও আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাফাহ টার্মিনাল ব্যবহার করে গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন,” দেশটির প্রেসিডেন্টের একজন মুখপাত্র আহমেদ ফাহমি এক বিবৃতিতে একথা বলেছেন।
তবে তিনি কোন সময়সীমার কথা উল্লেখ করেননি।
রাফাহ- মিশরের সিনাই মরুভূমি সংলগ্ন একটি সীমান্ত পথ যেটি গাজার সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। গাজা থেকে বের হবার আরও দুটি সীমান্তপথ রয়েছে, যেগুলো পুরোপুরি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে এবং দুটোই এখন বন্ধ।
ফলে মিশরের এই সীমান্ত পথটিই এখন গাজার উদ্বাস্তুদের একমাত্র ভরসা। তবে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরু হবার পর সীমান্তটি মিশর বন্ধ করে দেয়ায় সেটি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে আলোচনা চলছিল।
গত সাতই অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলের ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলে আক্রমণ করে হামাস। এ ঘটনার পর পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সীমান্তটি বন্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল।
ফলে রাফাহ সীমান্তটিই এখন বেসামরিক নাগরিকদের জন্য গাজা ত্যাগ করার একমাত্র স্থলপথ। গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রেও রাফাহ এখন গুরুত্বপূর্ণ।
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, গাজার জন্য মানবিক সহায়তা সামগ্রীপূর্ণ একটি উড়োজাহাজ উত্তর সিনাইয়ের আল-আরিশ বিমানবন্দরে ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছে।
রাফাহ সীমান্তের কাছে জ্বালানি ও মানবিক সহায়তা সামগ্রী বহনকারী কয়েক ডজন লরিও এখন গাজায় প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য যাচ্ছেন ঋষি সুনাক
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক দু দিনের সফরে মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। আজ মানে বৃহস্পতিবার সকালেই তার ইসরায়েল পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
সেখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রেসিডেন্ট ইসাক হারজগ এর সাথে তার সাক্ষাতের কর্মসূচি রয়েছে।
ওই অঞ্চলে দুদিনের সফরে তিনি আরও কয়েকজন নেতার সাথে সাক্ষাত করবেন।
ডাউনিং স্ট্রীট বলেছে যে হামাসের হামলার জের ধরে ইসরায়েল ও গাজায় যে প্রাণহানি ঘটেছে তাদের প্রতি নিজের সমবেদনা জানাবেন মি. সুনাক।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলিও আগামী কয়েকদিনে মিশর, তুরস্ক ও কাতার সফর করবেন।
এছাড়া বুধবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সাথে বৈঠকের কথা রয়েছে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্রান্ট শাপসের।
যুক্তরাজ্য এর আগে জানিয়েছিল, তারা একের পর এক হামলার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে এবং এর প্রতিকারে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।
ইরানকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র
নেটোতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত বিবিসিকে বলেছেন, ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্বের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত প্রাইভেট চ্যানেল ব্যবহার করে ইরানের সাথে যোগাযোগ করছে।
“আমরা জানি যে যুক্তরাষ্ট্র গোপনে ইরানের সাথে যোগাযোগ করেছে প্রাইভেট চ্যানেল ব্যবহার করে। এসব চ্যানেলগুলো এসব কাজের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো,” বলছিলে আইভো ডেয়ালডার। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নেটোতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “এবং কোন সন্দেহ নাই যে ইরান জানে, যুক্তরাষ্ট্র ঠিক কী করতে চায়। এটা এমন বিষয় নয় যে প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলবেন।”
এর আগে চলতি সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভ্যান বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র চলমান ঘটনাবলীতে হস্তক্ষেপ না করতে সতর্ক করার জন্য ইরানের সাথে কথা বলেছে।
চলমান সংকটে ইরানের অন্তর্ভুক্তি মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে সংকটকে ছড়িয়ে দেয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে। গত সাতই অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ইরানি কর্মকর্তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন বলে খবর বের হয়েছে।
এছাড়া ইরান সমর্থিত হেজবুল্লাহ সশস্ত্র গোষ্ঠী সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি সেনাদের সাথে গুলি বিনিময় করেছে।
‘ভেবেছিলাম আমরা নিরাপদ’
ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালের পুরো প্রাঙ্গণ জুড়ে রক্তের দাগ এবং যত্রতত্র পড়ে আছে ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিসপত্রসহ নানা কিছু।
কাছেই একটি পার্কিং এরিয়ায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাড়ির সারি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশেপাশের ভবনগুলোও।
গাজা শহর থেকে বিবিসি নিউজের রুশদি আবু আলৌফ জানিয়েছেন, যে সেখানে এখন আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে এবং মানুষজন আসলে বোঝার চেষ্টা করছে যে কী ঘটেছে সেখানে, যে জায়গাটিতে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মানুষ সুরক্ষিত থাকার কথা।
“আমরা বাড়িঘর ছেড়ে এখানে এসেছি,” বিস্ফোরণে বেঁচে যাওয়া একজন নারী বলছিলেন বিবিসিকে। “আমরা ভেবেছিলাম এটি নিরাপদ কিন্তু এখানেই বোমা ফেলা হলো”।
তবে অনেকেই এখনো ওই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অবস্থান করছেন কারা পরিবহন না থাকায় তারা দক্ষিণের দিতে যেতে পারছেন না।
লেবাননে হেজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে হামলা
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ বলেছেন তারা লেবাননে হেজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে।
এ সম্পর্কে আর কোন তথ্য তারা দেয়নি।
লেবাননের আল মায়াদিন টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে লেবাননের দক্ষিণে দুটি গ্রাম এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ওদেশার কাছে কাফার সুভায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে বলেও চ্যানেলটি জানিয়েছে।
হেজবুল্লাহ বলেছে যে তারা বুধবার ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলি মিলিটারি পোস্টে হামলা চালিয়েছে।
হামাসের মতো হেজবুল্লাহকেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও তাদের সহযোগীরা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
ইরান সমর্থিত এই সংগঠনটির লেবাননে শক্ত সামরিক ও রাজনৈতিক উপস্থিতি আছে। ২০০৬ সালে তারা ইসরায়েলের সাথে ভয়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে যাতে প্রায় বারশো মানুষ নিহত হয়েছিলো।
জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশন ভাষণ দিবেন বলে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে।
ওই ভাষণে তিনি ইসরায়েলে হামাসের হামলার জবাব এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার নিষ্ঠুর যুদ্ধের বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন বলে তার মুখপাত্র ক্যারিন জিন পিয়েরে জানিয়েছেন।
মি. বাইডেনের ইসরায়েল সফর শেষ হওয়ার পর তার ভাষণের বিষয়ে ঘোষণা দেয় হোয়াইট হাউজ।
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এ মূহুর্তে কোন স্পিকার না থাকায় ইসরায়েল ও ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য কোন প্রস্তাব পাশের সুযোগ নেই।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: