ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সাথে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ট্রাক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নারী ও দুইজন পুরুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মস্কো। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এই সেতু বিস্ফোরণে ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির ব্যাপারে ইউক্রেনকে দায়ী করেনি মস্কো। অন্যদিকে এই বিস্ফোরণে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগের সেতুতে ধস হওয়ায় উল্লাসে মেতেছেন ইউক্রেনীয়রা।
স্থানীয় সময় শনিবার (৮ অক্টোবর) সকালে ক্রিমিয়া থেকে সড়কপথে রাশিয়ায় যাওয়ার একমাত্র পথ কার্চ সেতুতে বিস্ফোরণটি ঘটে। বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে সেতুতে থাকা একটি তেলবাহী ট্রেনের সাতটি ট্যাংকারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বিস্ফোরণে ধসে পড়ে সেতুতে গাড়ি চলাচলের দুটি লেন। এ ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেতুতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পরপরই ক্রিমিয়া সেতুতে আগুন ধরে গেছে এবং সেতুর একাংশ পানিতে ধসে পড়েছে। এক বিবৃতিতে রাশিয়ার তদন্ত কমিটি বলেছে, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সেতুতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে তিনজন নিহত হয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা উল্লাস প্রকাশ করেছেন তাঁদের মধ্যে ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব ওলেক্সি দানিলভও আছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ৭০তম জন্মদিনের মাত্র এক দিন পর এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।
সেতুটি আংশিকভাবে ভেঙে পড়ার পর পানি থেকে একজন পুরুষ ও একজন নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। গত এপ্রিলে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ মস্কোভা ডুবির সঙ্গে সেতু বিস্ফোরণকে তুলনা করা হচ্ছে।
মস্কোর মতে নিহতরা একটি গাড়ির যাত্রী ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাড়িটি বিস্ফোরিত ট্রাকের কাছেই ছিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিস্ফোরিত ট্রাকের মালিক রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্রাসনোদার অঞ্চলের বাসিন্দা। তার বাসভবনে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দ্বীপের দখল নেয় রাশিয়া। পরে এই দ্বীপের সাথে রাশিয়ার সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য দীর্ঘ ১৯ কিলোমিটার সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ক্রিমিয়া দ্বীপ দখলে নেওয়ার চার বছর পর ২০১৮ সালে সেতুটিকে রাশিয়ার পরিবহন নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মহা ধুমধাম করে সেটির উদ্বোধন করেছিলেন।
এ বিষয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি সেতু ধসের ঘটনা নিয়ে ইউক্রেনীয়রা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা করছেন। এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সেতু ধসের ঘটনাকে গত এপ্রিলে কৃষ্ণসাগরে রুশ যুদ্ধজাহাজ মস্কোভা ডুবির সঙ্গে তুলনা করছে। সেতু ধসের ঘটনা নিয়ে কিয়েভের প্রতিক্রিয়া একধরনের সন্ত্রাসী আচরণ বলেও প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
এদিকে ক্রিমিয়ায় নিযুক্ত রুশ প্রধান সেরগেই আকিসনভ স্থানীয় জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। জনগণকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেছেন, ক্রিমিয়া উপদ্বীপে জ্বালানি ও খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: