পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসপ্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্থান অন্যান্য রাজনীতিবিদের চেয়ে একটু আলাদা। কোনো রাজনৈতিক পরিমণ্ডল নয়; সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে মমতার রাজনীতিতে হাতেখড়ি কলেজজীবন থেকে। ওই সময়েই কংগ্রেসে যোগ দেন।
১৯৮৪ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল বাদে ২০০৯ পর্যন্ত প্রতিটি লোকসভা নির্বাচনে তিনি জিতেছেন। রাজনৈতিক জীবনের একেবারে গোড়ায় মমতা ছিলেন কট্টর কংগ্রেস সমর্থক। তবে ১৯৯৭ সালে নিজেই দল গঠন করেন, যার নাম দেন তৃণমূল কংগ্রেস। সাদাসিধে জীবন যাপন করা মমতা পশ্চিমবঙ্গের আট থেকে ৮০ বছর বয়সী সবার কাছে তিনি 'দিদি' খ্যাতি পান।২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা। এবার নন্দীগ্রামে হারলেও দলের বড় জয়ে মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন তিনিই।
মমতা ইতিহাসে স্নাতক ও ইসলামের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর। রয়েছে শিক্ষা ও আইনের ডিগ্রি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিলিট ডিগ্রি দিয়েছে। অবসরে তিনি কবিতা লেখেন, ছবি আঁকেন। এখন পর্যন্ত তার তিন শতাধিক ছবি বিক্রি হয়েছে।নিজের রাজ্য তো বটেই, অন্যান্য রাজ্যের রাজনীতিবিদরাও তাকে সমাদর করেন।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটের বিরুদ্ধে ২১১টি আসনে জিতে তৃণমূল নেত্রী মমতা দ্বিতীয়বার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। ২০১২ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেন। ২০১১ সালে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২২৭টি আসনে জয় পায়। পশ্চিমবঙ্গের অষ্টম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার এ পদে আসীন হন মমতা। তার হাত ধরে অবসান হয় ৩৪ বছরের বাম-জমানার। ২০০৯ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা। ২০০৬ সালে পৌর নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর মমতা তার দলকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে মনোযোগী হন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি কলকাতার হাজরা অঞ্চলে এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা প্রমীলেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী, মা গায়ত্রী দেবী ছিলেন গৃহবধূ। পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে কিছুদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছিলেন। মমতা বিয়ে করেননি।
১৯৭৬ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কংগ্রেসের (আই) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মমতা। ১৯৯১ সালে নরসিমা রাও মন্ত্রিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রী হন এবং পরে পদত্যাগ করেন। ১৯৯৬ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে মনোমালিন্য শুরু হয়। দলে নৈতিক অবস্থান মজবুত না করলে তিনি গলায় শাল পেঁচিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন কংগ্রেস নেতাদের। একই বছর পেট্রোলিয়ামের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সমাজবাদী পার্টি সাংসদ অমর সিংহের কলার ধরে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন।
১৯৯৭ সালে রেল বাজেট পেশের সময় পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বৈষম্যের প্রতিবাদে তৎকালীন রেলমন্ত্রীর দিকে শাল ছুড়ে মেরেছিলেন মমতা। ১৯৯৯ সালে মমতা বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে শামিল হন। ওই জোট সরকারের রেলমন্ত্রী হন তিনি। ২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তার দল জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। তবে বামফ্রন্টের কাছে পরাজিত হয়। ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে এনডিএতে ফিরে আসেন এবং কয়লা ও খনি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত একমাত্র তৃণমূল সাংসদ।
একনজরে মমতা
দল: তৃণমূল কংগ্রেস
বয়স: ৬৬ বছর
শিক্ষা: ইতিহাসে স্নাতক ও ইসলামের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর। রয়েছে শিক্ষা ও আইনের ডিগ্রি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছে ডিলিট ডিগ্রি
পেশা: রাজনীতি। অবসরে কবিতা লেখেন, ছবি আঁকেন
স্লোগান: 'বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়'
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: