বিজ্ঞানীরা আগাম সতর্ক করেছিলেন,গুরুত্ব দেয়নি মোদি

সময় ট্রিবিউন | ২ মে ২০২১, ২১:২১

ছবি: ইন্টারনেট

বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশটি এখন করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ অতিক্রম করছে। প্রথম বছরের তুলনায় দেশটিতে সংক্রমণ বেড়েছে কয়েক গুণ।করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বিষয়ে পরামর্শ পেতে গত ডিসেম্বরে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বিজ্ঞানীদের পাঁচ সদস্যের একটি ফোরাম ‘ইন্ডিয়ান সার্স-কভ-২ জেনেটিক্স কনসর্টিয়াম` (INSACOG) গঠন করেছিল ভারত সরকার।

সে ফোরাম ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে মার্চের শুরুর দিকে সরকারকে সতর্ক করে। কিন্তু সরকার সে সতর্ক বার্তায় কান দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিজ্ঞানীরা।চলতি বছর মার্চের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সতর্ক করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের দাবি,

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও পরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছিলেন তাঁরা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কমিটির এক বিজ্ঞানী সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মার্চের শুরুতে সারস-কোভ-২-র নতুন ভ্যারিয়্যান্ট নিয়ে শীর্ষ আধিকারিককে রিপোর্ট করা হয়েছিল।

তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। যদিও আদৌ সেই রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছিল কিনা, তা নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স। এনিয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের কোনও উত্তর দেয়নি প্রধানমন্ত্রীর দফতর।

বিজ্ঞানীদের দাবি, ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারকে বিধিনিষেধ জারির পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনও কথা শোনা হয়নি। বরং মাস্ক ছাড়াই লক্ষাধিক মানুষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি ও বিরোধী নেতারা সভা করেছেন।

ইনসাকগ ফোরামের বিজ্ঞানী ও পরামর্শক কমিটির সভাপতি শহীদ জামিল বলেন, ‘হয়তো সরকার মনে করেনি গবেষণায় প্রাপ্ত ফল খুব বেশি সঠিক। সে কারণে তারা এতে মনোযোগী হয়নি।’তিনি বলেন, ‘পলিসি কী হবে সেটা তো প্রমাণের ভিত্তিতে; অন্য কোনো কিছুর ওপর নয়।
‘আমার উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে, এখানে বিজ্ঞানকে খুব বেশি মনোযোগ দেয়া হয়নি। কিন্তু আমি জানি কোথায় গিয়ে আমার থামতে হবে।

বিজ্ঞানী হিসেবে আমরা প্রমাণ হাজির করতে পারি; পলিসি তৈরির কাজ পুরোটাই সরকারের।’INSACOG-র সদস্য অজয় পারিদা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারির গোড়াতে কোভিডের ভারতীয় ভ্যারিয়্যান্ট বি.১.৬১৭-কে চিহ্নিত করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ১০ মার্চের আগে তা জানানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতরের অধীনস্থ ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলকে। সতর্ক করা হয়েছিল, ভাইরাসের এই নতুন ধরন আগের চেয়েও বেশি সংক্রামক।

সে সময় পাওয়া তথ্য থেকে ইনসাকগ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি বিবৃতির খসড়াও তৈরি করে দেয়। সেই খসড়া থেকে দেখা যায়, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে মিউটেশনের দুটি বিষয় লক্ষ্যণীয় ছিল।প্রথমত, ভাইরাসটি মানুষের কোষের মাধ্যমে দ্রুত ছড়ায়। দ্বিতীয়ত, মহারাষ্ট্র থেকে সংগৃহীত নমুনার মধ্যে ১৫-২০ শতাংশই তখন এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে যায়।

খসড়ায় বলা হয়, ই৪৮৪কিউ এবং এল৪৫২আর মিউটেশনগুলো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ।এতে বলা হয়, ই৪৮৪কিউ মিউটেশন অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি তৈরির পরও শরীরে সক্রিয় থাকতে পারে। এল৪৫২আর মিউটেশন দ্রুত ছড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে দিতে পারে।
সহজ কথায়, এই ভ্যারিয়েন্ট খুব সহজেই মানুষের কোষের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়াতে পারে এবং মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: