করোনা কালে মন ভালো রাখতে জার্নালিং

সময় ট্রিবিউন | ২৮ এপ্রিল ২০২১, ২০:৪২

ছবিঃ ইন্টারনেট

করোনা মহামারীর এই দুঃসময়ে সবার মনেই দুশ্চিন্তা এবং বিষণ্ণতা বাসা বেধেছে। এই সময়ে মন ভালো রাখতে জার্নালিং বেশ জোরাল ভূমিকা রাখতে পারে।বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু এখনো আমরা করোনার কবল থেকে মুক্ত হতে পারিনি।করোনা এখনো সমান ভয়াবহভাবে তার আগ্রাসন চালিয়েই যাচ্ছে।

এখনো প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং অগণিত মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে মানুষের মনের মাঝে যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা কাজ করছে সেটি উত্তর উত্তর বেড়েই চলেছে। তাছাড়া সারা বিশ্বে করোনা মহামারীর তাণ্ডব অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ধস, অনাচার-অবিচারের উত্থান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং মর্মান্তিক দাবানল সহ নানা ধরণের পীড়াদায়ক ঘটনা ঘটে চলেছে। সমগ্র মানবজাতি আজ এক চরম দুঃসময় পার করছে। মানসিকভাবে আমরা সবাই খুবই ভেঙ্গে পড়েছি।

অনেক দেশেই সরকারী নির্দেশনায় শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার পাশাপাশি মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার বিভিন্ন নির্দেশনাও প্রদান করেছে। এসব নির্দেশনার মূল লক্ষ্য হল আমাদের মানসিক অবস্থার উন্নতি সাধন যেন মানসিক সমস্যার নেতিবাচক প্রভাব আমাদের শরীরের উপর না পড়ে এবং আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারি। আর মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে প্রতি দিন কিছু লেখালেখি করা বা জার্নালিং খুবই কার্যকরী একটি উপায়।

করোনা সংক্রমণ রুখতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য চাইলেও এখন আমরা আমাদের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের সাথে দেখা করতে পারছিনা। তাদের সাথে নিজেদের মনের কথা ভাগ করে নিতে পারছিনা। এমন অবস্থায় অনেকের ক্ষেত্রেই এটি তাদের মানসিক অবস্থার উপর অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। কারণ তারা তাদের সমস্যা গুলো কারও সাথে ভাগ করে নিতে পারছেনা। দিন দিন এসব নেতিবাচক চিন্তাভাবনা মনের মাঝে পাহাড় সমান হয়ে আমাদের বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করছে।

এমন অবস্থায় যদি প্রতি দিনের অভিজ্ঞতা, মনের সব প্রশ্ন, ভালোলাগা মন্দলাগা গুলো দিন শেষে লিখে রাখার প্রয়াস করা যায় তাহলে মনের উপর এই বাড়তে থাকা চাপ অনেকটাই লাঘব হবে। জার্নালিং করার বিভিন্ন ইতিবাচক দিক গুলোর মধ্যে অন্যতম কিছু হল এতে মনের শান্তি ফিরে আসে, প্রতি দিনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে আগ্রহ বাড়ে, দুশ্চিন্তা কমে, সময় কেটে যায়, নেতিবাচক বিভিন্ন দিক থেকে আমাদের মনোযোগ সরে যায় ইত্যাদি। যা সরাসরি আমাদের ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক মনস্তত্ত্বের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আমরা আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার সাথে সাথে প্রাত্যহিক কাজের একটা তালিকাও লিপিবদ্ধ করতে পারি। আজ কি কি কাজ করবো বা ভবিষ্যতে কি কি কাজ করতে চাই সেগুলো আমরা লিখে রাখতে পারি। আবার আমাদের কতোটুকু কাজ সম্পন্ন হল, বা হলনা, না হওয়ার কারণ এবং সেগুলো করতে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে সেই পরিকল্পনাও লিপিবদ্ধ করতে পারি। করোনা নিয়ে আমাদের ভাবনা, দুশ্চিন্তা, এবং উদ্বেগের যায়গা গুলো এবং মুক্তি পাবার সমাধান হিসেবে কি কি করা যায় সেগুলো লিখে রাখতে পারি।

এতে করে আমাদের মাঝে মানসিক ভাবে লড়াই করার ইচ্ছে, আগ্রহ এবং সাহস সৃষ্টি হবে। আমাদের মাঝে ইতিবাচক মানসিকতার বিকাশ ঘটবে এবং আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে মানসিক সাপোর্ট দিতে পারবো। তাছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে এমন আশাবাদী চিন্তাভাবনা আমাদের মানসিক ক্ষতের পাশাপাশি ছোট খাটো শারীরিক ক্ষত সারিয়ে তুলতেও ভূমিকা রাখে।

সারা দিন ঘরে থেকে আমরা অবসন্ন সময় পার করছি। এই সময়ে জার্নালিং হয়ে উঠতে পারে আমাদের সময় কাটানোর খুব ভালো একটি মাধ্যম। যা আমাদেরকে এই হাপিয়ে ওঠা চরম দুঃসময় থেকে কিছুটা হলেও অব্যাহতি প্রদান করবে এবং মানসিক প্রশান্তি প্রদান করবে। লেখালিখি আমাদের মাঝে সেই বিশ্বাস সৃষ্টি করবে যার বলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পাবো। আমরা সুন্দর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে পারবো। তাই করোনা আতঙ্ক কাটাতে নিয়মিত লেখালিখি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং মানসিকভাবে নিজেকে সুস্থ রাখুন।

তথ্যসূত্র: মনের খবর



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: