সাধারণ ছুটিতে মানুষ ঢাকা ছাড়ায় করোনা সংক্রমণ বেড়েছে

সময় ট্রিবিউন | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৫:০৬

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর দেশে করোনা ছড়িয়েছে। সে সময় বিপুলসংখ্যক মানুষের ঢাকা ছেড়ে যাওয়াই দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের বিস্তারের প্রাথমিক কারণ। এছাড়া, বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের উদ্ভবের পরে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের মাধ্যমে আরও ভাইরাসের অনুপ্রবেশ ঘটে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), আইসিডিডিআরবি, আইদেশি, বাংলাদেশ সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম, যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্যাঙ্গার জিনোমিক ইনস্টিটিউট, যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ, এবং যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বাথের বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় এসব তথ্য তুলে এনেছে।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ গবেষণার বিষয়ে জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হওয়া গবেষণাটি শুরু হয় ২০২০ সালের মার্চ মাসে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রবেশ, বিস্তৃতি এবং এর বিস্তার প্রতিরোধে বিভিন্ন সময়ে বিধিনিষেধ এবং জনসাধারণের গতিবিধির ভূমিকার ওপর ভিত্তি করে এই বিশ্লেষণধর্মী গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণাটি ৪ সেপ্টেম্বর নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়।

গবেষণায় প্রাথমিকভাবে গত বছরের মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত ৩৯১টি করোনাভাইরাসের জিনোম বিশ্লেষণ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। বিস্তার প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার মার্চ মাসের ২৩ তারিখে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। বাংলাদেশ সরকারের এটুআই প্রোপ্রাম থেকে সংগৃহীত ফেসবুক এবং মোবাইল ফোন অপারেটরদের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে জনসাধারণের ঢাকা ত্যাগ করার প্রাপ্ত ডেটার সঙ্গে সার্স-কোভ-২ জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা হয়। এ সময় বিপুল মানুষ ঢাকা ছাড়ে। দেশব্যাপী করোনাভাইরাস বিস্তারের এটিই প্রাথমিক কারণ।

বিজ্ঞপ্তিতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিকোলাস থমসন বলেছেন, আমরা বহু বছর ধরেই বিভিন্ন সংক্রামক রোগের ওপর একসঙ্গে কাজ করছি। বিজ্ঞানীরা যখন জনস্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সঙ্গে যৌথভাবে একটি লক্ষ্য সামনে রেখে কাজ করেন, তখন কতটা সাফল্য অর্জন করা যায়, এই গবেষণাপত্রটি তারই একটি বাস্তব উদাহরণ।

হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ক্যারোলিন বাকি বলেন, এই গবেষণায় দেখানো হয়েছে, এ ধরনের একটি মিলিত বিশ্লেষণধর্মী গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি একটি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে কতটা মূল্যবান ভূমিকা রাখতে পারে। অন্য কোনো উপায়ে এটা অর্জন করা কঠিন। এ ধরনের গবেষণা শুধু চলমান করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষেত্রেই নয়, ভবিষ্যতের যেকোনো মহামারি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং এই গবেষণা নেতৃত্ব দানকারীদের একজন ফেরদৌসী কাদরী বলেন, বিশ্বজুড়েই বিভিন্ন দেশে কয়েক মাস পর মিউটেশনের মাধ্যমে নতুন ধরন তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু ধরন টিকার কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করছে দেশের সব মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার। এই টিকাগুলোর কার্যকারিতা বোঝার জন্য আমাদেরকে এ ধরনের কাজ অব্যাহত রেখে সরকারকে সময়মতো সঠিক তথ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে হবে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: