এক বছরের বেশি সময় ধরে মহামারী আকারে দাপট বজায় রাখা করোনাভাইরাস এরমধ্যে রূপ পাল্টেছে অনেকবার। রোগের ধরন, লক্ষণ ইত্যাদিতে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা গেছে। দেশে টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে ঠিক, তবে রোগের প্রকোপ এখনও বিদ্যমান। তাই সচেতনতায় অবহেলা করা চলবে না।
দীর্ঘমেয়াদে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত থাকার রয়েছে সাধারণ কিছু উপসর্গ।
কোনোরকম শারীরিক অসুস্থতা না থাকলেও কোভিড-১৯’য়ের উপসর্গগুলো নিজের মধ্যে চোখে পড়েছে এমন মানুষও আছেন।কয়েক সপ্তাহ বা মাসব্যাপি এই উপসর্গগুলো থাকতে পারে। স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল এমন কিছু উপসর্গ যা ইঙ্গিত করে দীর্ঘমেয়াদি কোভিডের দিকে।
১.অবসাদ: দীর্ঘদিন করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যারা ভুগছেন তাদের কর্মশক্তি অনেক কমে যায়। ফলে সবসময় তারা ক্লান্তি অনুভব করেন। এমনিক পর্যাপ্ত ঘুমানোর পরও তাদের ঘুমভাব আর অবসাদ দূর হয় না।
২.ব্রেইন ফগ: ‘ব্রেইন ফগ’ বা মাথায় ঘোলাটেভাব লেগে থাকা আরেকটি লক্ষণ যা প্রায়শই দেখা যায়। কোনো কাজে মনযোগ ধরে রাখা, কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করা, সিদ্ধান্ত নেওয়া ইত্যাদি কাজকে খুব কঠিন মনে হয়।
৩.ডিজ-অ্যাপনিয়া: শ্বাসকষ্টের আরেক নাম ‘ডিজ-অ্যাপনিয়া’। দীর্ঘদিন ধরে যারা মৃদু মাত্রায় কোভিড-১৯ এ ভুগছেন তাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা যায়। আগে যতটুকু হাঁটাহাঁটি, দৌঁড়ানো কিংবা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট হত না এখন তার থেকে কম পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে উঠবেন এই মানুষগুলো।
৪.বুক ব্যথা: বুকে তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব করা, বুক ধড়ফড় করা, সামান্য পরিশ্রমে হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি কোভিডের লক্ষণ।
৫.ঘুমের সমস্যা: অবিরাম শারীরিক নানান অস্বস্তিতে ভোগার কারণে এই রোগীদের ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। ঘুম আসলেও তা সহজেই ভেঙে যেতে পারে।
৬.অদ্ভুত শারীরিক অস্বস্তি: অনেকদিন ঘরে যারা করোনাভাইরাস সংক্রমণে ভুগছেন তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক তীক্ষ ব্যথা কিংবা শিহরণ অনুভূত হতে পারে। এই অনুভূতি কয়েকদিন থেকে সেরে যায়, আবার নতুন করে ফিরে আসে।
৭.হাড়ের জোড়ায় অস্বস্তি: অবসাদগ্রস্ত অনুভব করার পেছনে একটি বড় কারণ হতে পারে হাড়ের জোড়ায় ব্যথা কিংবা অস্বস্তি।
৮.জ্বর ও কাশি: কোভিড-১৯ এর অন্যতম উপসর্গ জ্বর ও কাশি। কাশির সঙ্গে শুকনো কফ দেখা দিতে পারে। জ্বর সেরে গিয়েও বারবার ফিরে আসতে পারে। করোনাভাইরাস হজমতন্ত্রেও প্রভাব ফেলে। যে কারণে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়া, পেটব্যথা ইত্যাদি।
৯.স্বাদ ও গন্ধ না বোঝা: করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি হারানো প্রথম সারির। সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া এবং চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পরও অনেক রোগী এই সমস্যায় ভোগেন।
সারা পৃথিবীতে যত মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের ৮০ শতাংশেরও বেশি বাসায় থেকে নানাভাবে উপশমের চেষ্টা করছেন।
বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নেবার নেবার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় মনে রাখতে হবে-
১. নিজেকে বিচ্ছিন্ন করুন
যদি সন্দেহ হয় যে আপনার মধ্যে কোভিড-১৯-এর এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে নিজেকে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন বা আইসোলেট করুন।
২. জ্বর আসলে কী করবেন
করোনাভাইরাস সংক্রমণ থামানোর যেহেতু কোন ঔষধ নেই সেজন্য সাধারণ সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে যে ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয় সেগুলো অনুসরণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। যেমনঃ প্যারাসিটামল খাওয়া এবং গার্গল করা করা যেতে পারে। সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
৩. কফ থাকলে যা করবেন
যদি আপনার কফ জমে থাকে বসার সময় পিঠে ভর দিয়ে হেলান দিয়ে না বাসাই ভালো। মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। এতে কফ কিছুটা হালকা হয়ে আসতে পারেন। এছাড়াও কফ হালকা করার জন্য এক চামচ মধু খেতে পারেন। এতে উপকার হতে পারে। তবে বারো বছর বয়সের নিচে বাচ্চাদের মধু দেয়া উচিত নয়।
৪. টেস্ট সেন্টারের ফোন নম্বর রাখুন
বাংলাদেশে এখন ৪৫টির মেতো ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাসের টেস্ট করানো হচ্ছে। আপনার নিকটস্থ টেস্ট সেন্টার কোথায় হতে পারে সে সংক্রান্ত খোঁজ রাখুন।
৫. অক্সিজেন ভাড়া নিতে পারেন
শ্বাসকষ্ট হলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রেই সেটি সম্ভব হচ্ছে না।রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পারলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় অক্সিজেন নিতে পারেন।ঢাকার বক্ষব্যধি হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাইফুদ্দিন বেন্নুর বলেন, "অক্সিজেন বাসায় নেবার সিস্টেম আছে। আমরা যখন লং টাইম অক্সিজেন থেরাপি দেই, আমরা তখন অক্সিজেন বাসায় নিতে বলি রোগীদের।" তিনি বলেন, কোভিড১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে হাই ফ্লো অক্সিজেন দিতে হবে।
৬. টেলিমেডিসিন সম্পর্কে জেনে রাখুন
করোনা সংক্রমনের এই সময়টিতে অনেক চিকিৎসক রোগীদের সরাসরি দেখছেন না।তবে গত দুইমাসে বহু ডাক্তার টেলিফোন এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
বেশকিছু সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডাক্তারদের মাধ্যমে টেলিফোনে অথবা ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। যেসব প্রতিষ্ঠান এ ধরণের সুবিধা দিচ্ছে তাদের ফোন নম্বর হাতের কাছে রাখতে পারেন। টেলিফোন নম্বর জানা থাকলে প্রয়োজনের সময় দ্রুত কাজে লাগবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: