বিশ্ব মশা দিবস আজ। সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের দিবস পালন করা হয়ে থাকে। দিবসগুলিতে বিশ্বব্যাপী আয়োজন করা হয় নানারকম উৎসব অনুষ্ঠান। তেমনিই একটি দিবস হচ্ছে বিশ্ব মশা দিবস। প্রতি বছর আজকের এই দিনে সারা বিশ্বে পালিত হয় দিবসটি।
১৯৩০ সাল থেকে প্রতি বছর ২০ আগস্ট দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৮৯৭ সালের ২০ আগস্ট ম্যালেরিয়া রোগের কারণ আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ চিকিৎসক রোনাল্ড রস। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি পরে চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান। তার সম্মানে যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন দিবসটি পালন শুরু করে।
মানুষের বিভিন্ন ভয়াবহ অসুখের মধ্যে মশা বাহিত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া, জিকা, ও জাপানিজ এনসেফালাইটিস উল্লেখযোগ্য। তাই মশাবাহিত রোগের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে বিশেষভাবে সচেতন করার জন্য এই দিবস সারা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয়। মশাবাহিত রোগ থেকে সাবধান হওয়ার জন্য, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এই দিনে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়।
উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা ও মানুষের অসচেতনতার কারণে বাংলাদেশ মশার প্রজননের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১২৩ প্রজাতির মশা শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান ঢাকায় আমরা পাই ১৪ প্রজাতির মশা। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছরই মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ। মশা নিয়ন্ত্রণ ও মশাবাহিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় হচ্ছে হাজার কোটি টাকার ওপরে।
বাংলাদেশ মশাবাহিত রোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ও জাপানিজ এনকেফালাইটিস। এই রোগগুলো যেহেতু মশাবাহিত, তাই এই রোগ থেকে মুক্ত থাকার প্রধান ও অন্যতম উপায় হলো মশা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। মশা নিয়ন্ত্রণ সঠিকভাবে করতে পারলেই আমরা রক্ষা পেতে পারি মশাবাহিত ভয়াবহ রোগ থেকে। তাই মশা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি নিজেকে সম্পৃক্ত করুন। সবার সম্মিলিত প্রয়াসই পারে আমাদের পরিবার ও দেশকে মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি দিতে।
মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ে বাংলাদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কম ছিল। তবে এ বছর দ্বিতীয় ঢেউয়ে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সংক্রমণরোধে টানা কঠোর লকডাউন আরোপ করে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত সাত হাজার ২৫১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৩১ জন। আক্রান্ত ও মৃতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি।
জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৭২ জন। কিন্তু জুলাই থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পায়। জুলাইয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ২৮৬ জন। তাদের মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়।
চলতি আগস্ট মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। মাসের প্রথম ১৯ দিনেই আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫৯৩ জনে। আর মারা গেছেন ১৯ জন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: