শীতের শুরুতে সাধারণত ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। বছরের এ সময়টায় তাই শিশুদের নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। প্রতিবছর দেশে গড়ে দুই লক্ষাধিক শিশু এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর মৃত্যু হচ্ছে প্রায় ২৪ হাজার শিশুর। পরিবেশ ও বায়ুদূষণের ফলে প্রতিবছর এ সংখ্যা বাড়ছেই। বৈশ্বিক হিসাবে, নিউমোনিয়া আক্রান্তের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ পাঁচে রয়েছে বাংলাদেশ।
আজ রোববার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নিউমোনিয়া দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করুন, প্রতিটি শ্বাসই গুরুত্বপূর্ণ’। এ উপলক্ষে নিউমোনিয়া নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি পালন করবে।
ইউনিসেফের তথ্য বলছে, ২০০০ সালের পর থেকে বিশ্বজুড়ে নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধে সচেতনতা বেড়েছে। ২০০০-২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে আগের তুলনায় ৫১ ভাগ শিশু নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউমোনিয়া প্রতিকার ও প্রতিরোধযোগ্য। অথচ দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর বড় কারণ এ রোগ। আগের চেয়ে সচেতনতা বেড়েছে। একই সঙ্গে মৃত্যু হারও কমেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে এ মৃত্যুহার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। তাই নিউমোনিয়ার বড় কারণ বায়ুদূষণ কমাতে হবে। একই সঙ্গে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর যথাযথ চিকিৎসার সুযোগও তৈরি করতে হবে। সেইসঙ্গে নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ এখনো নিউমোনিয়ায় মৃত শিশুর ৪২ শতাংশ রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা বা হাইপক্সেমিয়ায় মারা যায়।
আইসিডিডিআরবির গবেষণা বলছে, নিউমোনিয়ায় প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৭ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়, যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের সমস্ত মৃত্যুর ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশে এ পরিস্থিতি আরও খারাপ। নিউমোনিয়ায় প্রতি ঘণ্টায় দুই থেকে তিনজন শিশু মারা যায় এবং বছরে প্রায় ২৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়। এটি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ২৪ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী, যা বিশ্বব্যাপী গড় থেকে বেশি।
সর্বশেষ বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০২২ থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে শিশুর জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর হার ৬৫ শতাংশ থেকে ৫৫ শতাংশ কমেছে। শৈশবকালীন অপুষ্টি ১৫ শতাংশ নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী বলেন, নিউমোনিয়া এখনো বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান সংক্রামক কারণ।
অন্তঃসত্ত্বাদের আরএসভি ভ্যাকসিন প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আরএসভি ভ্যাকসিন দেওয়া হলে তা নবজাতক শিশুদের গুরুতর নিউমোনিয়া এবং হাইপোক্সেমিয়া (রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা) প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: