রাগলে পরে কি আপনার খেয়াল থাকে না? বাহ্যজ্ঞান শূন্য হয়ে যান আপনি? হতে পারে, আপনি বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের সমস্যায় ভুগছেন।
এটি একটি মানসিক রোগ। এই রোগে শুধু অপর্যাপ্ত রাগই নয়, সেইসঙ্গে দেখা দেয় অন্য অনেক সমস্যাও। একজন মনোবিদের কাছে বর্ডারলাইন পার্সোনালিটির রোগীরা রীতমতো চ্যালেঞ্জের বিষয়। কারণ, খুব সহজে এই ধরনের রোগীদের সমস্যার সমাধান করা যায় না।
এই বর্ডারলাইনের পেশেন্টরা ভীষণ নীতিবাগীশ হন। যেমন ধরুন, টিকিট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই টিকিট কাটছেন। হয়তো দেখা গেল একজন পরে এসে আগে লাইনে দাঁড়িয়ে গেল। অন্যরা এক্ষেত্রে মৃদু প্রতিবাদ করবেন। কিন্তু একজন বর্ডার লাইনের রোগী বলতে গেলে চড়াও হবেন সেই লোকটির ওপর। হ্যাঁ, এতটাই নীতিবাগীশ হন এই ধরনের রোগীরা।
এদের বন্ধুভাগ্য ভারী অদ্ভুত হয়। কিছুদিন অন্তর অন্তর বন্ধুরা পাল্টায়। এরা খুব চরমপন্থী হন। তাই যখন যাকে ভাল লাগে তার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকেন। আবার কিছুদিন পরই হয়তো দেখা যায়, সেই মানুষটাই খারাপ হয়ে গেল তাঁর কাছে। একেবারে মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ। রাস্তাঘাটে বা পুলিশের সঙ্গে নানা সময়ে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন এঁরা। এঁদের কোথাও যেন গভীর বিষাদ থাকে। কোনও অনৈতিক কাজ এঁরা করতে চান না। যদি সেই কাজকে অনৈতিক বলে মনে করেন। আর হ্যাঁ, এরা কখনও কোনও প্রত্যাখ্যান নিতে পারেন না, অপমান সহ্য করতে পারেন না এতটুকু। সামান্য অপমানিত হলেও তার রেশ থেকে যেতে পারে কয়েকঘণ্টা থেকে শুরু করে কয়েকদিন পর্যন্ত!
দেখা গিয়েছে, যাঁদের বাইপোলার ডিপ্রেশন রয়েছে, তাঁদের বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারও রয়েছে। আবারও বলি, এঁদের রাগ সাংঘাতিক হয়। একটা সামান্য ঘটনায় অপরিমিত রাগ হয় এদের। তবে তার মানে এই নয় যে, আপনি একটু বেশি রাগ করলেই ধরে নিতে হবে আপনার এই সমস্যা রয়েছে। যদিও দেখা গিয়েছে, যাঁদের শরীরে চণ্ডালের রাগ, তাঁরা কিন্তু অনেকেই বর্ডার লাইন পার্সোনালিটির রোগী হন।
বলাই বাহুল্য, অপর্যাপ্ত রাগ আপনার পারিবারিক জীবনকে তো বটেই, সামাজিক জীবনকেও বিপর্যস্ত করে দিতে পারে। হতে পারে, কিছুদিন ধরে আপনি অ্যাংজাইটিতে ভুগছেন। হতে পারে, ভেতরে ভেতরে আপনার মনের কোণে ডিপ্রেশন দেখা দিয়েছে। সেই কারণেও আপনি রেগে যাচ্ছেন এভাবে। তবে রাগ যে কারণেই হোক না কেন, একে কোনওভাবে প্রশ্রয় দেবেন না। মনে রাখবেন, মনোবিদরা রাগকে বলেন নেতিবাচক আবেগ বা নেগেটিভ ইমোশন।
আপনার বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার দেখা দিয়েছে নাকি অন্য কোনও সমস্যা থেকে আপনি এত রেগে যাচ্ছেন, তা বড় কথা নয়। রাগকে পোষ মানানোর চেষ্টা করুন।
রাগের বশে এমন কোনও কথা বলে বসবেন না, যা পরে গিলে ফেলতে হয়। এমন কিছু করে বসবেন না, যার জন্য সারাজীবন মাশুল গুনতে হয়। মনে রাখবেন, এই রাগ কিন্তু একটা সুন্দর জীবনকে ছারখার করে দিতে পারে। তাই নিজে থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারলে অবশ্যই মনোবিদের সঙ্গে দেখা করুন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: