ওয়ার্ডে থেকেই করোনা রোগী সুস্থ করার বিকল্প উদ্ভাবন

সময় ট্রিবিউন | ২৯ এপ্রিল ২০২১, ২১:৫৯

ছবি: সংগৃহীত

করোনায় এখন সারা বিশ্বেরই জেরবার অবস্থা। প্রতিরোধের পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত রোগীদের কার্যকর চিকিৎসাসেবা দিতে বিশ্বজুড়েই উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন নতুন যন্ত্রের। পিছিয়ে নেই দেশের উদ্ভাবকরা।

আর তাই করোনা রোগীদের সহজেই বেশি অক্সিজেন দিতে একটি মেডিকেল কিট উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের ছাত্র শিক্ষকদের একটি দল। আইসিইউ পর্যন্ত না না যেয়ে ওয়ার্ডে থেকে যদি করোনা রোগী সুস্থ হয়ে যায় এমন ভাবনা থেকেই এই পদ্ধতি উদ্ভাবন। দুই ধাপের পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এখন চলছে তৃতীয় ধাপ। পরীক্ষায় সফলতা আসলে এটি হতে পারে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার বিকল্প।

জানা যায়, হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন দেওয়া হয়; তাতেও কাজ না হলে বিদ্যুৎচালিত হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৬০ লিটার অক্সিজেন দেওয়া হয়। যা এইচডিইউ এবং আইসিইউতে ব্যবহার করা হয়।

বিষয়টি মাথায় রেখে বুয়েটের একদল শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কাজে লেগে যায় সাধারণ ওয়ার্ডেই সহজে রোগীকে কিভাবে বেশি মাত্রার অক্সিজেন দেয়া যায়। উদ্ভাবন করেন অক্সিজেট নামের ছোট একটি সিপ্যাপ। যার মাধ্যমে বিদ্যুৎ ছাড়াই সিলিন্ডার অথবা সাপ্লাই লাইনে সংযুক্ত করে বাইরের বাতাস টেনে অক্সিজেনের প্রবাহ মিনিটে ৬০ লিটার পর্যন্ত করা সম্ভব।

বুয়েট এর বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌফিক হাসান বলেন, “হাই প্রেশারে অক্সিজেন যখন দেওয়া হয় এখানে হাই ভেলোসিটিতে অক্সিজেনটাকে ইনজেক্ট করে, তাতে একটি লো প্রেশার তৈরি হয়। এটি পরিবেশ থেকে বাতাশ পুল করে মিক্সড করে আউটলেট দিয়ে ৬০ লিটারের একটি অক্সিজেনের এয়ার ফ্লো তৈরি করে। সেকেন্ডারি ইনলেটে অতিরিক্ত অক্সিজেন দিয়ে আমরা যেটা করতে পারি, এই ৬০ লিটারের মধ্যে অক্সিজেনের যে ঘনত্ব সেটা শতভাগ নেয়া সম্ভব। হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ৪-৫ লাখ টাকার নিচে নেই যদি ভালো কোন ব্র্যান্ড না হয়। আর আমাদের এই ডিভাইসটা সব খরচ মিলিয়ে ২০ হাজারে হয়ে যায়।”

গবেষকদল জানান, প্রাথমিক ট্রায়ালে অক্সিজেটের কার্যকরিতা প্রমাণিত হয়েছে। এখন ঢাকা মেডিক্যালে চলছে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল। যার মাধ্যমে বোঝা যাবে এটি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার বিকল্প হতে পারে কিনা। যেসব চিকিৎসক এটির ট্রায়ালে যুক্ত তারাও জানিয়েছেন সিপ্যাপটির কার্যকারিতার কথা।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম বলেন, “হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা এটি কিন্তু টেকনিক্যাল ব্যাপার। দামেরও একটা ব্যাপার আছে। ভবিষ্যতে যদি কোন কারণে আমাদের দেশে করোনা মহামারি ভারত কিংবা ব্রাজিলের মত অবস্থায় যায়। তখন বড় বড় হাসপাতালে বেড ও অক্সিজেন এর ঘাটতি তৈরি হবে। তখন সাধারণ এই মেশিনটা আমরা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলো বিদ্যুৎবিহীনভাবে রোগীকে সর্বোচ্চ অক্সিজেন দিতে পারবো।”

অক্সিজেনকে সহজলভ্য করে তুলতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার জন্য কথা চলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে। আলোচনা চলছে কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গেও। উদ্যোক্তাদের ইচ্ছে রয়েছে তাদের এই উদ্ভাবনের কারিগরি বিষয়টি উন্মুক্ত করে দেয়ারও।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: