চুয়েট শিক্ষার্থীদের অনলাইন টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন

সময় ট্রিবিউন | ৪ অক্টোবর ২০২১, ২২:৩৩

ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট)-এ পূর্বঘোষিত অনলাইন টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেছে শিক্ষার্থীরা। অনলাইন পরীক্ষার নীতিমালা শিক্ষার্থীসুলভ না হওয়ায় তারা এই পরীক্ষা বর্জন করেছে বলে জানা যায়।

গতকাল (৩ অক্টোবর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অনলাইন টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। এই শিক্ষাবর্ষের ৮৯০ জন শিক্ষার্থী ২য় বর্ষের ১ম সেমিস্টারের অনলাইন টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেছে।

আজ (৪ অক্টোবর) ও আগামীকাল (৫ অক্টোবর) যথাক্রমে ৩য় বর্ষ(২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) এবং ১ম বর্ষের(২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীদের অনলাইন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জানা গেছে, এই অনলাইন ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানায়, ল্যাব কার্যক্রম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা হয় নি। মেকাপ কিংবা রিভিশন ক্লাস ঠিকমতো নেয়া হয় নি এবং নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা হয় নি। অনেক বিষয়ের সিলেবাস এখনও রয়েছে বাকী। এরকম পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা অসম্ভব ছিল৷ এসব বিষয়ের দ্রুত সমাধান এবং পরীক্ষার জন্য বাস্তবসম্মত একটি নীতিমালার প্রয়োজন।

শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, যেহেতু বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলা এবং স্বশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে, তাই সম্ভব হলে আমরা আবাসিক হলে থেকে স্বশরীরে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী৷

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২২ সেপ্টেম্বর অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের নীতিমালায় দেখা যায়, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট পূর্বে জুম ক্লাস লিংকে জয়েন করতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ে যোগদানে ব্যর্থ বলে সেই পরীক্ষায় অনুপস্থিত বলে গণ্য হবে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষার্থীদের নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিকল্প ইন্টারনেটের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী ৫ মিনিটের বেশী সময় জুম মিটিংয়ে ডিসকানেক্টেড থাকলে তাকে পুনরায় যোগদান করতে হলে বিভাগীয় প্রধানের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া প্রশাসন কর্তৃক ভিডিও ক্যামেরার স্থাপনের নমুনা ভিডিওতে দেখা যায় পরীক্ষার্থীকে টেবিল থেকে বেশ উঁচুতে ভিডিও ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে যাতে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর খাতা সম্পূর্ণভাবে দেখা যায়।

এক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের চলতি টার্ম শেষ হওয়ার পরও ২ মাস কোনোরকম শিক্ষা কার্যক্রম বা পরবর্তী করণীয় কি হবে সেই বিষয়ে আমরা কোনো দিকনির্দেশনাই পাইনি। পরবর্তীতে আমাদেরকে একাডেমিক রুটিন দিয়ে ১ মাসের কার্যক্রম প্রকাশ করা হয়। ক্লাস শেষের প্রায় এক বছর পর উক্ত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন ছিলো, সেই সময় পর্যন্ত আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। এরকম অবস্থায় আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষা বর্জন ছাড়া অন্য উপায় ছিলোনা। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টির সুরাহা করবেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, অনেক শিক্ষার্থী প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকায় তাদের পক্ষে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ কখনোই সম্ভব না। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখানো পদ্ধতিতে ক্যামেরা স্থাপন করতে হলে কমপক্ষে দুইটি ডিভাইসের প্রয়োজন যা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব নয়। এসব সমস্যার প্রেক্ষিতে ১ম,২য়,৩য় শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা গত ২৭ সেপ্টেম্বর অনলাইন পরীক্ষার নীতিমালা পরিবর্তনের জন্য সকল বিভাগীয় প্রধানের নিকট আবেদন করেন। সে আবেদনের কোন যথোপযুক্ত উত্তর না পেয়ে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন।

আরেক শিক্ষার্থী জানান, "টানা বৃষ্টির কারণে গতকাল রাত ১১ টা থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ নেই আমার এলাকায়। এরকম বৈদ্যুতিক গোলযোগে প্রশাসনের কঠিন নীতিমালায় পরীক্ষা দেয়া প্রায় অসম্ভব আমার পক্ষে। যেহেতু অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই হল খুলে পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে, সম্ভব হলে আমরাও এরকম এরকম একটি ঘোষণার আশা রাখি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট।"

উল্লেখ্য, গত মার্চ,২০২০ থেকে করোনা মহামারীর পুরোটা সময় পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল চুয়েটে। প্রায় ১৮ মাস পর ৩ অক্টোবর,২০২১ থেকে নীতিমালা প্রদানের মাধ্যমে অনলাইনে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় চুয়েট প্রশাসন ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: