করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ৫০০ দিন আজ

সময় ট্রিবিউন | ২৯ জুলাই ২০২১, ২২:১৩

ফাইল ছবি

আজ ২৯ জুলাই। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া অতিমারি করোনাভাইরাসে কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে য়াজ পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ৫০০তম দিন। দীর্ঘ এ বন্ধে একেবারেই নাকাল শিক্ষা খাত। ওলটপালট হয়ে গেছে শিক্ষাপঞ্জি। আর অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে গেছে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী।

গত মার্চে বেসরকারি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রাথমিকের ১৯ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী শিখতে না পারার ঝুঁকিতে আছে। পুনরুদ্ধার কর্মসূচি হাতে নিয়ে এদের না শেখালে এ স্তরের ৬০ লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে। পাশাপাশি করোনায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার কিন্ডারগার্টেনগুলো। ভাড়া বাড়িতে অল্প পুঁজিতে চলা এসব স্কুলের বড় অংশ বন্ধ হয়ে গেছে। আর শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে অনলাইনে ক্লাস শুরু হলেও তেমন সাড়া মেলেনি।

গণসাক্ষরতা অভিযানের সমীক্ষা অনুযায়ী, ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ও দূরশিক্ষণ বা বেতার, টেলিভিশন, অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেওয়া পাঠদানের আওতায় এসেছে। উচ্চশিক্ষা স্তরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে মোটামুটি রকম ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে সেশনজট কমিয়ে আনলেও অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেড় থেকে দুই বছরের জটে পড়েছেন। হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়া শুরু করলেও অন্যরা নানা অজুহাতে পরীক্ষা নিচ্ছে না।

তবে করোনার এ সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কয়েকটি প্রদেশ ইতিমধ্যেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটির অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, হরিয়ানা, গুজরাটসহ অন্তত নয়টি প্রদেশ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১২ জুলাই বিহার এবং ১৫ জুলাই গুজরাটে সশরীরে ক্লাসের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৬ জুলাই ওডিশা প্রদেশ দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। শ্রীলঙ্কায় আগস্ট মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন দেশটির শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক জি এল পেইরিস।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী মনে করেন করোনা সংক্রমণ একসময় ৫ শতাংশের নিচে নেমে এসেছিল, তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে শিক্ষার্থীদের এতো ক্ষতি হতো না। সব মিলিয়ে ৫০০ দিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হলো, তা মারাত্মক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন মনে করেন বাংলাদেশের চেয়েও অনেক খারাপ অবস্থায় থেকে অনেক দেশ স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রেখেছে। তারা শিক্ষাটাকে চালুর চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশে এমন সময় গিয়েছে তখন চাইলে খোলা রাখা বা চেষ্টা করা যেত। কিন্তু সরকার কখনো খোলার চেষ্টা করেনি। বন্ধের এত দিনে যে লাখ লাখ শিক্ষার্থী বাসায় বসে আছে, এই ক্ষতি করোনার চেয়েও বেশি ক্ষতি বলে মনে হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. তানজিম উদ্দিন খান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেওয়ার পক্ষে। তিনি বলেন, আমরা মুখে মুখে বলেছি অমুক-তমুক করব কিন্তু বাস্তবে কিছুই করা হয়নি। কবে হবে, সেটাও কেউ বলতে পারছে না।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: