সন্তানের মধ্যে কার্যকর পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন যেভাবে

সময় ট্রিবিউন | ৬ মে ২০২৩, ০০:৩১

ছবিঃ সংগৃহীত

আপনার সন্তান হয়ত স্কুল পছন্দ করে। ক্লাস, শিক্ষক ও সহপাঠী সবাইকেই তার ভাল লাগে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঠিকমতো হোমওয়ার্কও করতে বসে। কিন্তু যে পরিমাণ পরিশ্রম সে দিচ্ছে, ফলাফল সেই অনুযায়ী ভাল হচ্ছে না।

এই দৃশ্যটি কি আপনার কাছে পরিচিত মনে হচ্ছে? তাহলে আপনার সন্তানের পড়ালেখার অভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।

আমাদের একটা সাধারণ ভুল ধারণা হল, বেশি সময় ধরেই পড়লেই কেবল বাচ্চা ভাল ভাবে পড়ছে। কিন্তু বাস্তবতা একটু ভিন্ন। বাচ্চা কত ভাল ভাবে কোনো বিষয় বুঝতে পারছে ও মস্তিষ্ক সেটা কতক্ষণ নিতে পারছে, তার ওপর নির্ভর করে “ভাল করে পড়া”র বিষয়টি।

অর্থাৎ আমাদের মনোযোগ দিতে হবে কার্যকর উপায়ে পড়ার ওপরে।
বাবা বা মা হিসেবে সন্তানকে এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারেন আপনি। সন্তানের মধ্যে কার্যকর পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন যেভাবে:

১. পড়ার জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করে দিন

আপনার সন্তানের কি নিজস্ব ডেস্ক বা লেখাপড়ার আলাদা জায়গা আছে? সেখানে কি পর্যাপ্ত আলো আসে? সেখানে মনোযোগ নষ্ট করে এমন কিছু কি আছে?
পড়ালেখার জন্য দরকারি কলম, পেনসিল, হাইলাইটার, কাগজসহ অন্যান্য উপকরণ তার হাতের কাছেই রাখুন।
সন্তানকে নিজের পড়ার জায়গাটা সাজাতে দিন। সেটা পরিষ্কার করা ও প্রতি রাতে গুছিয়ে রাখার দায়িত্বও তাকে দিন।

২. একটি প্ল্যানার বা ক্যালেন্ডার তৈরি করে দিন

সঠিক ভাবে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সময়ের সঠিক ব্যবহার জরুরি। তাই, আপনার সন্তান হোমওয়ার্ক প্ল্যানার ব্যবহার করতে পারে কিনা দেখুন। প্ল্যানার হলো দরকারি তথ্যসহ কবে কী করতে হবে তার একটি লিস্ট। বাড়ির কাজ ও পরীক্ষার জন্য দরকারি তারিখ একটি প্ল্যানার, ক্যালেন্ডার বা ডায়েরিতে লিখে রাখতে শেখান ওকে। বিশেষ করে স্কুল বা প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব বিষয় জানানো হচ্ছে। সময়মতো ওদেরকে অ্যাসাইনমেন্টগুলি শেষ করতে সাহায্য করুন। সিলেবাস ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে, পরীক্ষার আগে রিভিশনের জন্য শিডিউল বানিয়ে নিন সন্তানের সঙ্গে বসে। একই ভাবে বড় অ্যাসাইনমেন্টও ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন। এই কাজগুলি কখন শেষ হতে পারে তার একটা খসড়া পরিকল্পনা বানিয়ে নিন। এতে করে বাচ্চার মধ্যে না বুঝে পড়া মুখস্থ করার ও দীর্ঘসূত্রিতার অভ্যাস তৈরি হবে না। এছাড়াও অনেক হোমওয়ার্ক জমে যাবে না।

৩. নোট করতে শেখান

নোট করার ক্ল্যাসিক সিস্টেম আপনার সন্তানকে ক্লাসে পড়ানো টপিক আরো ভাল ভাবে শিখতে ও মনে রাখতে সাহায্য করবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, হাতে লেখা নোট মনে রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর।
তাছাড়া ছোটখাটো দরকারি পয়েন্ট দাগানো বা হাইলাইট করাও শেখাতে পারেন সন্তানকে। এতে করে একই সঙ্গে কোন বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ তা শিখবে।

৪. পড়া রিভাইস দিতে শেখান

ভাল ফলাফল ও ভাল প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে পরীক্ষার আগে শুধু সিলেবাস রিভিশন দেয়াই যথেষ্ট না।
এর বদলে আরো কার্যকর পদ্ধতি যেমন, প্র্যাকটিস টেস্ট করতে উৎসাহ দিন সন্তানকে। রিভিউ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুন, উত্তরের ছোট ব্যাখ্যা দিতে বলুন।
তাহলে তারা আসলেই পড়া বুঝেছে কিনা তা নিশ্চিত হতে পারবেন।

৫. বুঝে মুখস্থ করতে বলুন

একদিন অনেক ক্ষণ পড়ার বদলে একটা বিষয় প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়লে তা অনেকদিন মনে থাকে।
সন্তানকে পড়ালেখার এমন একটি শিডিউল বানাতে সাহায্য করুন যাতে সে প্রতিদিন বিভিন্ন বিষয়ের পেছনে সময় দিতে পারে।
প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ মিনিট সময় নিয়ে আগের পড়াগুলি দেখে নেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন সন্তানের মধ্যে।
পড়ার মাঝে নির্দিষ্ট সময় পর পর বিরতি নিতে উৎসাহ দিন। প্রতি ঘণ্টায় ১৫ মিনিটের একটি বিরতি আপনার সন্তানের মনোযোগ ও ফলপ্রসূতা বাড়াবে।

৬. 'হেল্প' চাইতে শেখান

আপনার সন্তান হয়তো কোনো একটা টপিক বুঝতে পারছে না বা হোমওয়ার্ক ঠিকমতো শেষ করতে পারছে না। এরকম হলে যে কারো সাহায্য নিতে হবে, তা শেখান।
ক্লাস টিচারের কাছে কীভাবে নিজের সমস্যাগুলি তুলে ধরতে হবে তা বুঝিয়ে বলুন।
সন্তান যদি শুরুতে না পারে, আপনি নিজেও সমস্যা বা দুঃশ্চিন্তার কথা তুলে ধরতে পারেন সন্তানের শিক্ষকের কাছে।
অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ও প্রয়োজনে তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা তাদের সাহায্য করাও এক্ষেত্রে সমান দরকারি।

৭. মনোযোগ নষ্ট করে এমন জিনিস এড়িয়ে চলতে শেখান

পড়ার সময় সন্তানকে কম্পিউটার ও মনোযোগ নষ্ট করতে পারে এমন যেকোনো ডিভাইস দূরে সরিয়ে রাখতে শেখান। আবার একসাথে নানা রকম কাজ করার চেষ্টা করলে, তাতেও মনোযোগ নষ্ট হয়। তাই একেবারে একটি কাজে মনোযোগ দিতে বলুন। একসঙ্গে কয়েকটি বিষয় পড়ার চেষ্টা না করে, কেন একটি বিষয়ের পড়া ভাল ভাবে শেষ করার পরই অন্য আরেকটি বিষয় শুরু করবে, তা বুঝিয়ে বলুন।

এর বাইরে সন্তানের ভাল ফলাফল নির্ভর করে অন্য আরো কয়টি বিষয়ের ওপর। সব বাচ্চা একই রকম ভাবে পড়ে না, অনেকে পড়তে পছন্দও করে না।
আপনার সন্তান কেমন, তার ওপর ভিত্তি করে তাকে সাহায্য করুন। সরাসরি কোনোকিছু চাপিয়ে না দিয়ে বা বাধ্য না করে। সন্তানের পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমও নিশ্চিত করুন। মনোযোগ বাড়াতে ও পড়াশোনায় সময় দিতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও সমান গুরুত্বপূর্ণ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


জনপ্রিয় খবর