'বেকারদের হাতে বিষের বোতল দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়িয়ে দিন'

সময় ট্রিবিউন | ১০ মে ২০২১, ০৯:০৫

প্রতীকী ছবি
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে চাকরি প্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীদের মাঝে। একদিকে বয়স শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়, অন্যদিকে মধ্য ও নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থীদের পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সর্বোচ্চ অনিশ্চয়তা ও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন তাঁরা। এমন অবস্থায় অতিদ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া জামান। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে না পারলে বেকারদের হাতে বিষের বোতল দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি'র কাছে।
 
পাঠকের উদ্দেশ্যে খোলাচিঠিটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-
 
বরাবর,
মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী, 
বিষয়ঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে সকল পরীক্ষা গ্রহণ প্রসঙ্গে।
 
জনাবা, 
যথাবিহিত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা চাকুরী প্রত্যাশী ছাত্র ছাত্রী আপনার কাছে অনুরোধ করি যে সরকার কর্তৃক বেকারদের হাতে বিষের বোতল ধরিয়ে দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়িয়ে দিন। অনার্স-মাস্টার্স করা ছেলেটার ও মেয়েটার চাকুরী নেই, টিউশন নেই, কাজ নেই, সার্কুলার নেই, বেশিরভাগ চাকুরীর পরীক্ষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির সাথে বন্ধ। SSC,HSC, Honrs ও Master’s সকল পরীক্ষা বন্ধ। কিন্তু বয়সতো থেমে নেই। বয়সতো আপন গতিতে চলমান। অনেকে চাকুরী পাওয়ার আশা হারিয়ে ফেলেছে, দুবেলা দুমুঠো টিউশন করে আহার জোগাতো, পিতা মাতার ভরনপোষণ করতো, আজ তাও করোনার অজুহাত দিয়ে সরকারের কিছু খামখেয়ালি লোক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রেখেছে। এর সুফল ও কুফল কি?
 
সরকার কি ভেবেছে? যেখানে রাষ্ট্রের সকল কাজকর্ম চলমান। নির্বাচনী প্রচারণা, ভোট গ্রহন, যাতায়াত, সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা, মিল কারখানা- গার্মেন্টস, ট্রেন-বাস সার্ভিস, সামাজিক কর্মসূচি, সরকারি বেসরকারী খেলাধুলা ইত্যাদি। কি হচ্ছে না বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে! কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  খুললেই শুধু করোনা বাড়বে? এমন যদি  হয় তাহলে মিল- কারখানা, গার্মেন্টস, বাস সার্ভিস ও ট্রেন থেকে কি করোনা ছড়ায় না? এটি মিথ্যে অজুহাত। সব কাজ যদি করা যায় তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন থমকে থাকবে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা পড়ে তারা মানুষ হবে তাই এতো চিন্তা? তাহলে গার্মেন্টস-কলকারখানায় কাজ করে দেশের অর্থনৈতিক চাঁকা দাড় করায় তারা কী মানুষ নয়? বিশ্ব ব্যাপি মহামারী হয়েছিল আবার হবে তাই বলে কাজ করা বন্ধ থাকবে? মোটেও না।
 
কাজ কাজের গতিতে চলবে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। এই শিক্ষা যদি হয় অটো পাশ তাহলে সেই শিক্ষা দিয়ে জাতি কি শিখবে?!! শিক্ষার্থীরা আবার চাকুরীর জন্য ছোটাছুটি করবে, চাকুরীও পাবে কিন্তু জাতি তাদের কাছ থেকে কি পাবে? প্রশ্ন কী আবেগের কাছে, শিক্ষা মন্ত্রী ও সচিব দের কাছে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেই কি শুধু করোনা বাড়বে?  প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটা নির্দিষ্ট যায়গায় সীমাবদ্ধ। শিক্ষক, ছাত্র ছাত্রী এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তো আর যাবে না। তাই স্বাস্হ্যবিধি মেনে ক্লাস করলে প্রবলেম হওয়ার তো কথা নয়।
 
তাই শিক্ষার বিকাশে ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে পরীক্ষাগুলো অনতিবিলম্বে নিয়ে নিন। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গামী না হয়ে ছোট ছোট কাজে নিয়োজিত হয়েছে ও নতুন করে হবে। পরে কিন্তু শিক্ষায় আর ফেরানো যাবে না। শিক্ষার হার কমে যাবে। “সচেতন হই, সচেতনতা বাড়াই” এই স্লোগান সামনে রেখে স্বাস্হ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে শিক্ষার মান  উন্নয়নে সহযোগীতা করুন। ২৩মে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিন। আমাদের শিক্ষার বিকাশে সহযোগিতা করুন। ২৩মে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খুললে আবার SSC HSC দের অটো পাশ দিতে হবে, ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট আবার বেড়ে আগের রূপ ধারণ করবে। তাই অটো পাশ নয় ও সেশনজট নয়। শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় মনোযোগ তৈরি করুন। “আমরা আর ঘরে থাকতে চাই না”। “শিক্ষাকে হা বলি, করোনাকে না বলি, স্বাাস্হ্য বিধি মেনে চলে, চলো এবার ক্লাসে ফিরে যাই” কথাটি বাস্তবায়িত করুন। 
 
অতএব জনাবার কাছে আকুল আবেদন, যাহাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  খুলে সকল পরীক্ষা গ্রহণ করার মাধ্যমে তাহার বিহিত ব্যবস্থা করতে জনাবার একান্ত মর্জি হয়।
 
বিনীত নিবেদক,
সামিয়া জামান(ঢাবি)
আইন বিভাগ।
 
এর আগে চলতি মাসের ২৪ মে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া না হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে ‘অবিলম্বে সকল বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে হবে’ নামের একটি শিক্ষার্থীদের বৃহৎ ফেসবুক গ্রুপ। ওই গ্রুপের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পরীক্ষা কার্যক্রম চালানোর মত বাস্তবতা দেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই দাবি করে ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনলাইন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত’ প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা। তারা মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতেই নতুন এ সিদ্ধান্ত। তাই এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়ার দাবি তাদের।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: