অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় এক বছরের ব্যবধানে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এ অঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে মুক্ত দেশেেগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। শীর্ষে রয়েছে ভুটান।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক কনজারভেটিভ থিংকট্যাংক দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ২০২১ সালের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচক শীর্ষক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় অবস্থানে আছে ভারত, অন্যদিকে সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে নেপাল। চলতি বছরের সূচকে বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশেরই স্কোর কমেছে। তবে বৈশ্বিক হিসাবে সূচকে ১০০-তে ৫৬.৫ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম।
এবারের সূচকে সরকারের অখণ্ডতা, করের বোঝা, ব্যবসার স্বাধীনতা ও শ্রম স্বাধীনতায় আগের চেয়ে বাংলাদেশের স্কোর বেড়েছে। মূলত করের বোঝা স্কোরের উল্লেখযোগ্য উন্নতির সুবাদে সূচকে বড় উল্লম্ফন ঘটেছে বাংলাদেশের। একে একটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক স্বাধীনতার একটি বড় প্রভাবক ধরা হয়। হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, করের বোঝা পরিমাপের ক্ষেত্রে সরাসরি করের বোঝা, ব্যক্তিগত ও করপোরেট পরিসরে করের হার এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় শতাংশ হিসেবে মোট আদায়কৃত কর রাজস্ব আয়- এসবগুলো বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়।
বিগত দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনে ধীরগতি কিন্তু স্থির প্রকৃতিতে অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংকটি।
চারটি বিস্তৃত ক্যাটাগরি- আইনের শাসন, সরকারের আকার, নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা ও উন্মুক্ত বাজারের ওপর ভিত্তি করে একটি দেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা মূল্যায়ন করে থাকে এই হেরিটেজ ফাউন্ডেশন। এ চারটি বিস্তৃত ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত ১২টি পরিমাপক হলো : সম্পত্তির স্বাধীনতা, বিচার বিভাগীয় কার্যকারিতা, সরকারের অখণ্ডতা, করের বোঝা, সরকারি ব্যয়, রাজস্ব স্বাস্থ্য, ব্যবসার স্বাধীনতা, শ্রম, মুদ্রানীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও আর্থিক স্বাধীনতা।
২০২১ সালের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে ১৭৮টি অর্থনীতির মধ্যে সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াসহ পাঁচটি অর্থনীতি ‘মুক্ত’ শ্রেণিতে রয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ ৩৩টি অর্থনীতি ‘বহুলাংশে মুক্ত’ তালিকায় স্থান পেয়েছে। স্পেন, ভিয়েতনাম, রাশিয়াসহ ৫৯টি অর্থনীতি ‘মাঝারি মাত্রায় মুক্ত’ তালিকায় আছে। অন্যদিকে ৬০-এর কম স্কোর পাওয়া ৮১টি অর্থনীতি ‘বহুলাংশে অনুদার’ তালিকায় আছে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দিক দিয়ে এখনো সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে উত্তর কোরিয়া। ভেনিজুয়েলা ও কিউবার পরই দেশটির অবস্থান।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোও বাংলাদেশের মতো একই সমস্যায় ভুগছে। এর মধ্যে রয়েছে- আইনের শাসন ও নিয়ন্ত্রণ দক্ষতায় দুর্বল পারফরম্যান্স। দেশগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাও আছে যার প্রতিফলন দেখা গেছে সূচকে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের আকার ও উন্মুক্ত বাজার ক্যাটাগরিতে এগোচ্ছে বাংলাদেশ, আইনের শাসন ও নিয়ন্ত্রণ দক্ষতায় সমস্যা রয়ে গেছে। বাজার কমবেশি উন্মুক্ত হলেও নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা খুবই দুর্বল; অনেক ক্ষেত্রেই নিয়মবহির্ভূত ও অসঙ্গত। অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের প্রসারের কারণে অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: