স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম এখন দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু :জিএম কাদের

সময় ট্রিবিউন | ৩০ জুন ২০২১, ০০:৩৪

স্বাস্থ্যমন্ত্রী দুর্নীতি আমলে নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের)। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম এখন দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু দুর্নীতি কমানোর জন্য কোনও কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ দায়িত্বপ্রাপ্তরা দুর্নীতির বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন বলে মনে হয় না। অভিযোগগুলো গুরুতর। দেশবাসী আশা করে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে যথাযথ তদন্ত হবে ও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

মঙ্গলবার সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দের সমালোচনা করে জিএম কাদের বলেন, বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থ বছরের চেয়ে ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বেশী। কিন্তু জিডিপির হিসাবে ০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সুপারিশ অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হওয়া উচিত কমপক্ষে জিডিপির ৫ শতাংশ। সেখানে গত ১২ বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ শতাংশের নীচে।

তিনি বলেন, বাজেটে কোভিড-১৯ এর টিকা প্রয়োগের কথা বলা হলেও আমদানির জন্য এ খাতে আলাদা কোনও অর্থ বরাদ্দের উল্লেখ নেই। তবে বাজেট বক্তৃতায় কিছু দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ এবং ভ্যাকসিন ক্রয়ের অর্থ প্রাপ্তির আশ্বাস উল্লেখ করা আছে। ভ্যাকসিন খাতে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে।

বর্তমান বিশ্বে প্রতিটি দেশই করোনাভাইরাস প্রতিরোধের অস্ত্র হিসাবে ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী প্রতিটি দেশের ৮০ শতাংশ জনসাধারণকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা গেলে জীবন যাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। সে লক্ষ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক দেশ যথেষ্ট সফলতাও পাচ্ছে। আমাদের দেশে ভ্যাকসিন সংগ্রহ এখন পর্যন্ত প্রকৃত অর্থে সুনির্দিষ্ট ও সুনিশ্চিত বলা যায় না। ফলে, ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ পুনরায় শুরু ও শেষ কীভাবে ও কবে হবে কেও জানে বলে মনে হয় না।

করোনা ভাইরাসের টিকা দেশে উৎপাদনে সরকারি প্রতিষ্ঠান অসহযোগিতা করছে অভিযোগ তুলে জিএম কাদের বলেন, অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভাকসিন তৈরিতে বেশ কিছু সাফল্য দেখিয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়। কিন্তু সরকারি সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অসহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যাতে করে সে উদ্যোগটি মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে সুশাসনের ব্যতয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, যতই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হোক সুশাসন না থাকলে দুর্নীতি, অপচয় ও সমন্বয়হীনতার কারণে বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। সুশাসন না থাকলে অর্থ বরাদ্দের সুফল যাদের উদ্দেশ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তারা লাভ করেন না। এক কথায় সুশাসন ছাড়া বাজেট তৈরি ও বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ অর্থহীন। বাজেটের উদ্দেশ্য জীবন মানের উন্নয়ন। শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া মানুষের জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব হয় না। সুশাসনের মাধ্যমেই সেটা সম্ভব। এ বিষয়ে বাজেটে কোনও দিক নির্দেশনা নেই। বরং সুশাসনে ব্যত্যয়ের সুযোগ বাজেটে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ রাখা হয়েছে সেটা দুর্নীতিকে বৈধতা দেওয়ার সামিল এটি সুশাসনের পরিপন্থী। এ বিষয়টি নিশ্চিত ভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে। যে কারণে এ সুযোগ রাখা হয়েছে বলা হয় সেটা হল দেশে বিনিয়োগবৃদ্ধি ও বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করা। বেশ কয়েকটি বাজেটে কিছু দিন থেকে এ সুযোগ দেওয়া হয়ে আসছে। ফলাফল শূন্য।

বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গত পাঁচ বছরে এক হাজার ২৪টি অর্থপাচারের ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে। বিএফআইইউ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে অর্থপাচারের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তথ্য প্রমাণসহ প্রতিবেদন পাঠিয়েছ। ফলাফল, এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন কোনও তথ্য নেই।

ব্যাংকিং খাতের সমালোচনা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে। বাংলাদেশ ব্যংকের রিপোর্ট অনুযায়ী খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, হলমার্কের চার হাজার কোটি টাকা অর্থ লোপাট, বিসমিল্লাহ গ্রুপের আর্থিক অনিয়ম এবং বেসিক ব্যাংকের অনাদায়ী খেলাপি ঋণ উদ্ধারের বিষয়ে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ এখনও দৃশ্যমান নয়। ২০১৮-২০২১ এই স্বল্প সময়ে ৫৯ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকার অনিয়ম চিহ্নিত করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান কম্প্রোট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)। তাদের তথ্য মতে এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া আর্থিক অনিয়মের ৫২ দশমিক ১৮ শতাংশই হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকিং খাতের। যার পরিমাণ ৩১ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ না দেখিয়ে তা মুছে ফেলার সক্রিয় প্রয়াস চলছে। খেলাপি ঋণ বাড়লেও অনিয়মের মাধ্যমে সেটা লুকিয়ে ফেলা হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণের ৪০ শতাংশই হচ্ছে খেলাপি ঋণ।

জিএম কাদের বলেন, বিগত ১০ বছরে ব্যাংকিং খাতের অবস্থা খারাপের দিকে গেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, বিগত সময়ে আর্থিক অনিয়মের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দায়ীদের বিরুদ্ধেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যে কারণে, অনিয়মের পরিমাণ আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা না হলে ভবিষ্যতে আর্থিক অনিয়মের পরিমাণ আরো বাড়বে। এই অনিয়ম রোধে সুস্পষ্ট কোন দিক নির্দেশনা বাজেটে পরিলক্ষিত হয়নি।

কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কোটি কোটি মানুষ তাদের জীবিকা হারিয়েছেন উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, জীবিকা হারা মানুষদের মধ্যে যারা হত দরিদ্র তাদের না খেয়ে থাকার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। জীবিকা হারিয়ে নতুন দরিদ্র সৃষ্টি হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ এবং প্রতিদিন এর সংখ্যা বাড়ছে। করোনার কারণে লকডাউন ও ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। সেখানেও জীবন বিপন্ন হবে। আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা দিয়ে এ সকল দারিদ্র ও নব্য দরিদ্রদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এখানে সমাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতা অনেক বৃদ্ধি করতে হবে। অর্থের প্রয়োজন বাড়বে।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: