রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভার উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়ন। বহু বছর ধরে এ ইউনিয়নের পঞ্চাশ ভাগ মানুষের জীবন জড়িয়ে আছে মেহেদী পাতার চাষের সাথে। মেহেদি চাষ আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ায় জমিতে অন্যান্য শাকসবজি ও ফসলের মতোই সারা বছর বাড়ির আশপাশে অনেকটা জায়গা নিয়ে তারা চাষ করছে মেহেদির। অনেকে আবার অন্যের জমি বিভিন্ন চুক্তিতে ভাড়াও নিচ্ছেন মেহেদি চাষের জন্য। আর এ ব্যবসায় হাত লাগান পরিবারের নারী, পুরুষ এমনকি স্কুল পড়ুয়া শিশুরাও।
কিন্তু করোনা ভাইরাস ও দেশে কঠোর লকডাউন থাকায় বাজারে মেহেদী পাতা বেচা কেনা বন্ধ। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। বিক্রি না হওয়ায় মেহেদী পাতা গাছেই ঝড়ে যাচ্ছে। আবার বৃষ্টি না হওয়ায় অনেক মেহেদী গাছ মরে যাচ্ছে বাগানেই। সব মিলিয়ে চরম সংকটে দিন কাটছে এ ইউনিয়নের মেহেদী চাষীরা। বেকার হয়ে পড়েছেন অনেক নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা। এদিকে অনেক চাষী মেহেদী চাষ বাদ দিয়ে গো-খাদ্য হিসেবে নেপাল থেকে আনা নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন।
মেহেদী চাষীরা জানায়, বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠানে হাত রাঙ্গাতে মেহেদির চাহিদা বা প্রচলন সেই আদিকাল থেকেই। এছাড়া ঈদের উৎসবে হাত রাঙ্গাতে মেহেদির কোন বিকল্পই নেই। পাশাপাশি বিভিন্ন পার্লারে মেহেদির চাহিদা থাকতো বছর জুড়েই। নারী-পুরুষ সবার মাঝেই এই মেহেদী ব্যবহারের প্রচলন দেখা যায়। আবার হাত রাঙ্গানোর পাশাপাশি মেহেদীর রয়েছে নানান ওষুধী গুণ। বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত করা মেহেদী পাওয়া গেলেও ব্যবহারকারীদের কাছে চাষ হওয়া প্রাকৃতিক মেহেদী পাতার চাহিদাও রয়েছে প্রচুর।
বাহেরচর গ্রামের কৃষক হাসান মিয়া জানায়, মেহেদি চাষে উৎপাদন খরচ কম। প্রতিমাসে কীটনাশক ছাড়া আর কোনো খরচ হয় না। একবার চারা লাগানোর পর গাছ বাঁচে ১০ থেকে ১৫ বছর। বাগান থেকে পাতা কাটা হয় তিনবার। বাজারে মেহেদী পাতার আঁটি পাঁচ’শ টাকা দরে বিক্রি হতো। তাই মেহেদি প্রেমী ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে দীর্ঘদিন ধরে সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নের শ্যামলাসী,লুটেরচর,বাহেরচরসহ বিভন্ন গ্রামে বানিজ্যিকভাবে মেহেদি চাষ করে আসছিলো কৃষকরা। বেচা কেনা ভালো হওয়ায় দিনে দিনে এ জনপদে বাড়ছিলো মেহেদি চাষ। অনেক পরিবার মেহেদি চাষ করে স্বাবলম্বীও হয়েছিলেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে মেহেদী পাতা বেচা কেনা বন্ধ থাকায় চরম অর্থ সংকটে দিনযাপন করছেন তারা।
এবিষয়ে সাভার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নাজিয়াত আহমেদ বলেন। এবার এ উপজেলায় প্রায় পঞ্চাশ হেক্টর জমিতে মেহেদী চাষ হয়েছে। পাতার আবাদও ভালো তবে অনাবৃষ্টি ও চলমান লকডাউনে মেহেদীর বেচাকেনা কম থাকায়, চাষীরা একটু সমস্যায় পরেছে। তাই চাষীদের উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বাড়তি সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে আশ্বাস দেন তিনি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: