“পুলিশ হোক জনতার” কথাটি যেন আজ ঠাকুরগাঁওয়ে সকলের মুখে বলা চলে। মাত্র ১৩০ টাকা খরচ করে স্বপ্ন পূরণ হলো ঠাকুরগাঁওয়ের ২৯ জন তরুণ তরুণীর।
ঘুষ-তদবির ছাড়াই পুলিশে চাকরি হয়েছে তাদের। মূল্যায়ন হয়েছে মেধা ও যোগ্যতার। পূরণ হয়েছে হতদরিদ্র বাবা মা সহ নিজের স্বপ্ন। ঘুষ কিনবা কোন তদবির ছাড়াই সন্তানের চাকরি হওয়ায় খুশিতে কেঁদে ফেললেন অনেক অভিভাকই।
গত মঙ্গলবার রাতে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় নিয়োগপ্রাপ্তদের জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দেয়া ফুলের শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে এমনি চিত্রটি চোখে পড়ে। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ফলাফল ঘোষণা হয়।
ফুলেল শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ তানভীরুল ইসলাম, তদন্ত একেএম আতিকুর রহমান, অপারেশন জিয়ারুল ইসলাম, এসআই আনিস সহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দরা।
জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ে দিনব্যাপী পুলিশের ‘ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে’ গত ১৬ থেকে ১৮ নভেম্বর শারীরিক পরীক্ষা ও ১৯ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষা শেষে গত ২৬ নভেম্বর জেলার ২৯ জনকে পুলিশের ‘ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে’ নির্বাচন করা হয়।
এর মধ্যে সদর থানায় রয়েছেন ১৫ জন। যার মধ্যে ৪ জন নারী ও ১১জন পুরুষ রয়েছে। এছাড়াও জেলার বালিয়াডাঙ্গী, রাণীশংকৈল, পীরগঞ্জ ও হরিপুর উপজেলায়ও পুলিশের ‘ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে’ নির্বাচন করা হয়।
শুধু চাকরি নয়, নিয়োগপ্রাপ্তদের সব ধরনের মেডিক্যাল চেকআপ বিনামূল্যে করা হয়েছে। সেই সাথে নিয়োগপ্রাপ্তদের জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে ফুলের শুভেচ্ছা।
পুলিশের চাকরি পয়ে আনন্দিত হয়ে বিলন ও সাথি আক্তার বলেন, ছোট থেকে পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম আমরা। ভাবতাম চাকরি পেতে হলে ঘুষ দিতে হবে। এটা নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিলাম। এমনকি যখন আমাদের ভাইবা দেবার আগ পর্যন্ত শুনতে হয়েছে টাকা ছাড়া নাকি চাকরি হয়না। কিন্তু সকলের ধারনা ভুল। ঘুষ ছাড়া নিজের সক্ষমতা দিয়ে পুলিশে চাকরি পেয়েছি আমরা। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
সালন্দর ইউনিয়নের বাসিন্দা বিমল চন্দ্র বলেন, আমি একজন দিনমুজুর। আমার ছেলে চাকরি পেয়েছে বিনা পয়সায়। শুধু ১৩০ টাকা খরচ করা হয়েছে। তাছাড়া আর কোন টাকা লাগেনি। আমি ধন্যবাদ জানাই পুলিশকে যারা এতো সুন্দর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়োগগুলো নিয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ তানভীরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ নজিরবিহীন ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আইজিপি শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে এ নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য কড়া নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমরা পেশাদারিত্ব, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। যারা উত্তীর্ণ হয়েছে সবাই যোগ্যতা সম্পন্ন। পুলিশের চাকরি পাওয়ার সকল যোগ্যতা তাদের আছে। যাচাই-বাছায়ের পর শারীরিক সক্ষমতা অর্জন,লিখিত ও মৌখিক পরিক্ষায় তারা ভালো করেছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: