ইঁদুরের গর্তের ধান বেচে শীতের গরম পোশাক কিনবে শিশুরা ! 

রাণীশংকৈল প্রতিনিধি  | ৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৫:২৪

ছবিঃ সংগৃহীত

আমন ধান কাটার পর ধানক্ষেতে ভিড় করছে শিশু-কিশোররা। তাদের লক্ষ্য ইঁদুরের গর্তগুলো। এসব শিশুরা প্রতিদিন সকাল হলেই দলবেঁধে ছুটে যায় ফসলের মাঠে। ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধানের শিষ সংগ্রহ করে এরা।

উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায় দল বেঁধে সদ্য কেটে নেওয়া আমন ধান খেতে ঘুরছে এক দল শিশু-কিশোর। এরা বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ওদের কারও হাতে খুন্তি আবার কারও হাতে কোদাল কিংবা শাবল। কেউ বহন করছে প্লাস্টিকের বস্তা। তাদের এ আয়োজন মূলত ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে ধান সংগ্রহ করার জন্যই। কথা হলে এই শিশু-কিশোরেরা জানায়, সংগ্রহ করা ধান বেচে তারা শীতের গরম পোশাক কিনবে। 

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ঝরে পড়া ও ইঁদুরের গর্তে জমানো ধান সংগ্রহে মেতে উঠেছে স্থানীয় শিশু-কিশোরেরা। সকালের রোদ কিছুটা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওরা দল বেঁধে নেমে পড়ে সদ্য কেটে নেওয়া আমনের মাঠে। মাটি খুঁড়ে ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করে তারা। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ইঁদুরের গর্তের চারপাশ খুঁড়ে এসব ধান সংগ্রহ করে শিশুরা। ভাগ্য ভালো হলে দু’চারটি গর্তেই মেলে ১০ থেকে ১২ কেজি ধান।

এছাড়াও আমন ধান কেটে নেয়ার পর ক্ষেতে অবশিষ্ট পড়ে থাকা ধানের শীষ কুড়িয়ে নিচ্ছে শিশুরা। যখন ধানের পরিমাণ বেশি হবে তখন তা বিক্রি করে, কেউ আবার সে ধান মজুদ করে রাখে নিজেদের জন্য।

ধান কুড়াতে আসা শিশুরা জানায়, মালিকরা ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার পর অনেক ধানের ছড়া এমনিতেই পড়ে থাকে, সেগুলো আমরা কুড়িয়ে নিই। এছাড়াও ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ ধান। এসব ধান আমরা বাড়িতে জমা করে রাখি। যখন ধানের পরিমাণ বেশি হবে তখন তা বিক্রি করি।

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায় উপজেলার ভরনিয়া মণ্ডলপাড়া গ্রামে ধান সংগ্রহ করতে এসেছে ৭-৮ জন শিশু কিশোর। ১০ বছরের শিশু নিমাই চন্দ্র জানায়, বিভিন্ন মাঠে সংগ্রহ করা ধান বিক্রির টাকা দিয়ে কেউ শীতের পোশাক, কেউ খাতা-কলম কেনে। আবার অনেকের পরিবারের ৩-৪ মাসের খাবারের সংকুলান হয়।

স্থানীয় প্রবীণ কৃষক আবুল হাসান বলেন, আগেকার সময়ে মাঠ ভরে যেত ধান কুড়ানি শিশুদের আনাগোনায়। তখনকার সময়ে ধান কাটার একটা উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। এখন সবকিছু পাল্টে গেছে। অনেক শিশুকে এখন মাঠে দেখা যাচ্ছে। তারা ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করে।

রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ‘ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ ও ফসল শূন্য মাঠ থেকে ধান কুড়ানোর বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। মাঠে ধান থাকা অবস্থায়ই ইঁদুর গর্তে ধান মজুদ করে রাখে। এসব ধান সংগ্রহ করা সময়সাপেক্ষ তাই কৃষকরা এসব ধানের দিকে নজর দেয় না। তাই স্থানীয় শিশুরা এগুলো সংগ্রহ করে বিক্রি এবং নিজেরাও চাল বানিয়ে খায়।

তবে এসব গর্তে সাপ, পোকা-মাকড় থাকতে পারে যা শিশুদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: