খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে কুড়িগ্রামের ৫০ হাজার বানভাসি

সময় ট্রিবিউন | ১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৪৭

বানভাসিদের অনেকে গত ছয় দিন ধরে সরকারি রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ছবি: সংগৃহীত

খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে পড়েছেন কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদী পাড়ের ৫০ হাজার বানভাসি মানুষ। অনেক বানভাসির রান্না করার সুযোগ থাকলেও ঘরে খাবার নেই, আবার অনেকের খাবার থাকলেও রান্নার সুযোগ নেই।

বানভাসিদের অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে আসবাবপত্র ও গরু ছাগল নিয়ে গত ছয় দিন ধরে সরকারি রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

কুড়িগ্রামের নয় উপজেলায় বানভাসী মানুষের জন্য জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় থেকে ২৪০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ চার লাখ ৯৫ হাজার টাকা। তালিকা প্রস্তুত বিলম্ব হওয়ার কারণে এখনো এসব সরকারি ত্রাণ সহায়তা দুর্গতদের হাতে পৌঁছেনি।

বানভাসিদের অভিযোগ তাদের ঘরে খাবার নেই। কেউ সাহায্যও করছে না। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। তিনিও গত ছয় দিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর পলিথিনের ঝুপড়ির নিচে বসবাস করছেন।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার জোরগাছ গ্রামের বানভাসি নবিল উদ্দিন (৬৩) জানান, ছয় দিন আগে বাড়িতে পানি ঢুকেছে কিন্তু পানি নামার লক্ষণ নেই। রান্নার চুলা পানিতে তলিয়ে থাকায় রান্না করতে পারছেন না। শুকনো খাবার খেতে হচ্ছে। আত্মীয়-স্বজনরা রান্না করে খাবার পাঠাচ্ছেন মাঝে মধ্যে। নলকূপ পানির নিচে তলিয়ে থাকায় পান করার বিশুদ্ধ পানি সংকটে আছেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী জানান, চাহিদার চেয়ে খুবই অপ্রতুল ত্রাণ বরাদ্দ পেয়েছেন। সামান্য ত্রাণ নিয়ে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। বানভাসিদের তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। আজ বুধবার অথবা আগামীকাল বানভাসিদের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে। তার ইউনিয়নে পাঁচ হাজার মানুষ বানভাসি হলেও তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন মাত্র ৫০০ জনের জন্য।

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে আর ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ছয় দিন ধরে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচে আছে।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা হায়দার আলী সরকার বলেন, বানভাসিদের জন্য প্রাপ্ত সরকারি ত্রাণ সহায়তা উপজেলাগুলোতে পাঠানো হয়েছে এবং এসব ত্রাণ ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বানভাসিদের মধ্যে বিতরণ চলমান আছে।

চাহিদা অনুযায়ী ত্রাণ সহায়তা চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন: