এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টি করে টিকা নিতে উৎসাহিত করলেন দুই যুবক

সময় ট্রিবিউন | ১৪ জুলাই ২০২১, ০১:৪৭

ছবি : সময় ট্রিবিউন

"দশে মিলে করি কাজ,হারি জিতি নাহি লাজ" স্লোগানটির বাস্তব প্রয়োগ ঘটেছে টাংগাইলের ঘাটাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের শাহপুর গ্রামে। কোভিডের এই দুঃসময়ে গ্রামের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দল বসে না থেকে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে লোকজনকে ভ্যাক্সিন গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছে। অনুপ্রাণিত করেই থেমে থাকেনি গ্রুপটি। সাথে নিজেদের খরচে ভ্যাক্সিনের নিবন্ধন করে টিকা কার্ড প্রিন্টও করে দিয়েছে তরুণ শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা কোভিড-১৯ এর ভ্যাক্সিন গ্রহণ শুরু করেছে।ইতোমধ্যে অনেকেই দুইটি ডোজই গ্রহণ করেছে।গ্রামের তরুণ শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় অসাধ্য এই কাজটি সম্পন্ন হয়েছে।

জানা যায়,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে লোকজনকে ভ্যাক্সিন গ্রহণের সুফল বুঝিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করে সেই নিবন্ধন কার্ড প্রিন্ট করে তাদের টিকাকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।তরুণদের এই গ্রুপটিকে নেতৃত্ব ও আর্থিক সহায়তায় ছিলেন তরুণ ব্যবসায়ী মোঃ আমিনুল ইসলাম রুবেল ও তরুণ শিক্ষক মোঃ খালিদ হাসান খোকন।

কথা হয় তরুণ শিক্ষক খালিদ হাসান খোকনের সাথে ।তিনি জানান,"মূলত সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এই কাজটি হাতে নেই আমরা।গ্রামের সহজ -সরল মানুষরা ভ্যাক্সিন সম্পর্কে অনেক উদাসীন এবং তাদের মাঝে ভ্যাক্সিন গ্রহণ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা আছে।সেই চিন্তা থেকেই রুবেল প্রথমে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সাথে সচেতনতা ও নিবন্ধন কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে কথা বলেন,সেই আলোকে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নিরলস পরিশ্রমে গ্রামের প্রায় পাঁচশত নারী- পুরুষকে ভ্যাক্সিনের নিবন্ধন করে দেওয়া হয়।সেই সাথে টিকার কার্ড প্রিন্ট করে সেই কার্ড বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌছে দেয় টিমটি।গ্রামে ভ্যাক্সিন নিয়ে অনেকের মাঝে যে ভ্রান্ত ধারণা ছিলো তা অনেকাংশেই লাঘব হয়েছে এবং লোকজন ভ্যাক্সিনের জন্য নিবন্ধন করছে।

তাদের কাজটি কতটা কঠিন ছিলো সেই বিষয়ে খোকন বলেন," ছেলেদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে।প্রায় তিন কিলোমিটারের গ্রামটিতে অনেকগুলো পাড়া এবং প্রায় চার হাজার মানুষের বসবাস।আমরা সেচ্ছাসেবকদের কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করে দেই।গ্রুপের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করে টিকা কার্ড প্রিন্ট করে পৌছে দেয়,এবং নিবন্ধন ধারীদের টিকা কেন্দ্রে গিয়ে ভ্যাক্সিন গ্রহণে অনুপ্রাণিত করে গ্রুপ গুলো।ইতোমধ্যে টিকা গ্রহণ শুরু হয়েছে।আমাদের এই কাজ শতভাগ শেষ হওয়া না পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।ইতোমধ্যে প্রায় ৭০-৮০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে।আমাদের টার্গেট প্রাপ্যতার ভিত্তিতে শতভাগ মানুষকে ভ্যাক্সিনের আওতায় আনা।রুবেল, আওয়াল,কাজী,সুমন,ফরহাদ,শান্ত,জিহাদ,সাব্বির,প্রান্তিক,রিমন প্রমুখ বিভিন্ন গ্রুপের দায়িত্ব পালন করে।"

আর্থিক সহায়তা সম্পর্কে খোকন জানান,"তরুণ ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম রুবেল আর্থিক সহায়তা করেছে এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়েছে।"

জানা যায় এর আগেও প্রায় শতাধিক পরিবারকে নিজেদের টাকায় উপহার সামগ্রী দিয়েছিলো গ্রামের তরুণরা।তরুণদের এমন কর্মকাণ্ড কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল।

শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম মিয়া বলেন,"নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসনীয় কাজ।আমাদের গ্রামের ছেলেরা প্রায় অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছে।গ্রামে ভ্যাক্সিন নিয়ে অনেক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা আছে,ছেলেরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের সেই ভুল ধারণা পালটে দিয়েছে এবং ভ্যাক্সিন গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেছে।"

সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন লেবু বলেন,"গ্রামের ছেলেদের এই কাজটা একটা বিরল উদাহরণ।এটাই সম্ভবত বাংলাদেশে প্রথম।আমি ছেলেদের ধন্যবাদ জানাই এবং এমন কাজে আমি সব সময় তাদের পাশে থাকব"।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: