ফরিদপুরের সালথায় রফিক মোল্যা (৫০) নামে এক ভয়ঙ্কর গ্রাম্য মোড়লকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া এলাকার মৃত মেছের মোল্যার ছেলে। খারদিয়া এলাকার বাসিন্দা একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত আসামী আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে রফিক মোল্যা পরিচিত।
মূলত বাচ্চু রাজাকারের আধিপত্য ধরে রাখতে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে নিজেকে ভয়ঙ্কর গ্রাম্য মোড়ল হিসেবে গড়ে তোলে। ধর্ষণ ও দ্রুত-বিচার আইনে মামলাসহ অন্তত ৯টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়ে আসছিল। অবশেষে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাতে গোপালগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে সালথা থানা পুলিশ। রবিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
রফিক গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার নিজ এলাকার সাধারন মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছেন। গ্রেপ্তারের খবরের পর সরেজমিনে রফিকের নিজ এলাকা খারদিয়ায় গেলে বেরিয়ে আসে তার নানা অপকর্মের তথ্য। খারদিয়া এলাকার বাসিন্দা ও বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলার অন্যতম স্বাক্ষী মো. রওশন শেখ অভিযোগ করে বলেন, ফাঁসির রায় হওয়ার পর বাচ্চু রাজাকার এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। বাচ্চু রাকাজার এলাকা ছাড়ার পর তার গ্রাম্য দলের নেতৃত্বের হাল ধরেন রফিক মোল্যা। রফিক নেতৃত্বে আসার পর এলাকায় গড়ে তুলেন বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনী দিয়ে সর্ব-প্রথম আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে বসতঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। কয়দিন আগে আমার বাড়িও ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় রফিকের বিরুদ্ধে আমি থানায় একটি মামলা করি। মামলার পর থেকে আমি ও আমার পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেয়। রফিকের ভয়ে এখন আমি এলাকা ছাড়া।
তিনি আরো বলেন, বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় শুধু আমার বাড়ি নয়- খারদিয়া, উথুলী ও উজিপুর এলাকার অন্তত ৫ শতাধিক নিরহ মানুষের বসতঘর ভাঙচুর করেছে। শতশত মানুষের উপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে। তার বাহিনীর হামলায় অনেকে এখনও পঙ্গু হয়ে আছে। রফিকের আপন ফুফাতো ভাই খারদিয়া গ্রামের আরেক বাসিন্দা ইউপি সদস্য মো. সিরাজ বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, বাচ্চু রাজাকার সকল কর্মকান্ড চালাচ্ছে রফিক। ফাঁসির রায়ের সময় এলাকার যারা বাচ্চু রাকাজারের অপকর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরে চরম জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে রফিক ও তার বাহিনী। এলাকায় সালিশ-বাণিজ্যসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা এই বাহিনী করছে না। যারাই রফিকের কথা না শুনে তাদেরই বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হয় গরু-বাছুরসহ ঘরের মালামাল। মোটকথা রফিক বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনে রয়েছে হাজারো পরিবার। শতাধিক পরিবার রয়েছে এলাকা ছাড়া। আমরা সাধারন মানুষ এই বাহিনীর হাত থেকে মুক্তি চাই।
এ বিষয় যদুনন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন মিয়া বলেন, বাচ্চু রাজাকারের শ্যালক ইলিয়াছ কাজী ও রফিক মোল্যা বিএনপির জামায়াতের লোকজন নিয়ে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেছে। ওই বাহিনী দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারন মানুষের উপর ব্যাপক জুলুম ও নির্যাতন করছে। সালিশের নামে চাঁদাবাজি করে নিরীহ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব বিষয় আমরা সবই জানি বা শুনেছি। কিন্তু কিছু করার নেই। মূলত এই সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে যারাই মুখ খুলে তাদের উপরই জুলুম-নির্যাতন করা হয়। তাই ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। আমরা এই বাহিনীকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সালথা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আসিকুজ্জামান বলেন, বাড়িঘর ভাংচুরের মামলার আসামী রফিক মোল্যা পলাতক ছিলো। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার গোপালগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে মোট ৯টি মামলা রয়েছে। রফিককে রবিবার ফরিদপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: