লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর রমণীমোহন ইউনিয়নে সেতুর অভাবে দুর্ভোগে রয়েছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। নিত্যদিনের যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনে তাদের একমাত্র ভরসা বাঁশ ও গাছের সাঁকো। ইউনিয়নের বালুর চর-চরমেঘা সড়কের পশ্চিম চর রমণীমোহন গ্রামে মেঘনার শাখা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর ওপর বাঁশ ও গাছ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন এলাকাবাসী। নদীর পূর্ব পাড়ের শিক্ষার্থীরা পশ্চিম পাড়ের উত্তর চর রমণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রায়পুর উপজেলার চরকাচিয়া ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এবং মোল্যার হাট এল কে এইচ উচ্চবিদ্যালয়ে প্রতিদিন সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করছে। অপরদিকে নদীর পশ্চিম পাড়ের শিশু ও বৃদ্ধদের পূর্ব পাড়ে অবস্থিত মসজিদ এবং ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় গিয়ে নামাজ ও কোরআন শিক্ষা নিতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, লক্ষ্মীপুর শহর ও হাট-বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতে তাদের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার হতে হয়। এতে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধরা পা পিছলে নদীর পানিতে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। শিশুরা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার সময় অভিভাবকরা কোলে করে তাদের সাঁকো পার করে দেন। ফলে অধিকাংশ সময় তারা ঠিকমতো বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে পারে না।
জানা গেছে, এই সাঁকো থেকে পা পিছলে নদীতে পড়ে এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল খালেকসহ কয়েকজন পঙ্গু হয়েছেন। অপর দিকে সাঁকো পার হতে না পারায় অনেক বৃদ্ধ মানুষ মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারছেন না।
সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল খালেক ও গ্রামপুলিশ সদস্য হাছান আলী জানান, নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দাদের উৎপাদিত ধান ও সয়াবিনসহ বিভিন্ন ফসল পারাপার করতে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরতে হয়। এ ছাড়া অসুস্থ রোগীদের হাসপাতাল নিতেও একই পথ অবলম্বন করতে হয়।
‘বালুর চর’ গ্রামের বৃদ্ধা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘আগে গ্রামবাসী এই নদী নৌকায় করে পারাপার হতো। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে স্থানীয়ভাবে চাঁদা দিয়ে সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আহাম্মদ আলী বলেন, ‘প্রতিবছরই এই সাঁকো সংস্কার করতে গিয়ে স্থানীয়দের ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। গ্রামবাসী নিজেরা চাঁদা দিয়ে এই টাকা দেন। সাঁকোর জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হলে নদীর দুই পাড়ের প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দা নিরাপদে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহন করতে পারবেন। বর্তমানে নদীর পূর্ব পাড়ের বাসিন্দারা রিকশা ও অটোরিকশায় যাতায়াত করার সুযোগ পেলেও পশ্চিম পাড়ে কোনো যানবাহন চলাচল করে না। ফলে তাদের ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার হেঁটে যাতায়াত করতে হয়।
আহাম্মদ আলী ও আব্দুল খালেক আরও জানান, এলাকাবাসীর একটাই দাবি, এই শাখা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা। জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচন এলে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও পরে তারা সেই কথা আর রাখেন না।
এ বিষয়ে চর রমণীমোহন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউছুফ ছৈয়াল বলেন, ‘মেঘনার এই শাখা নদীর ওপর ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোর স্থানে একটি সেতু নির্মাণ করার কোনো বিকল্প নেই। এই একটি সেতুর জন্য দুই পাড়ের প্রায় ১০ হাজার মানুষ আধুনিক যোগাযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দুই বছর আগে উপজেলা থেকে ইঞ্জিনিয়ার এসে এই জায়গায় সমীক্ষা চালান। তখন তারা জায়গাটি সেতু নির্মাণের উপযোগী বলে মতামত দিলেও পরবর্তী সময়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা এই জায়গায় সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি।’
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: