নরসিংদীতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড 

আশিকুর রহমান | ৮ মার্চ ২০২৪, ১৮:৫৭

নরসিংদীতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড 
নরসিংদীতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী শহিদুল ইসলাম সাগরকে (৪৩) আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। একইসাথে হত্যায় সহযোগিতা জড়িত থাকার অপরাধে বাকি ৪ জনের মধ্যে একজনের যাবজ্জীবন ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং বাকি তিনজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
 
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিকেলে নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক শামীমা পারভিন এ রায় দেন।
 
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, নিহত মার্জিয়া আক্তার কান্তার স্বামী কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার খলিগঞ্জ গ্রামের গনি মিয়ার ছেলে শহীদুল ইসলার সাগর, তার ফুফাতো ভাই একই জেলার রতনপুর গ্রামের মামুন মিয়া, কুয়াকাটা জেলার ছোবাহানের ছেলে হোটেল আল মদিনার মালিক দেলোয়ার হোসেন (৪৪), তার ভাই মোঃ আনোয়ার হোসেন (৩৭) ও আল মদিনা হোটেলের ম্যানেজার পটুয়াখালী জেলার মেহেরপুর গ্রামের মোঃ আমির হোসেন। এদের মধ্যে ঘাতক স্বামী শহীদুল ইসলাম ও তার ফুফাতো ভাই  মামুন পলাতক রয়েছেন।
 
আদালত ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার বীর বাঘবের গ্রামের সোহরাব হোসেন রতনের মেয়ে মার্জিয়া আক্তার কান্তার সঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানার খলিগঞ্জ গ্রামের গনি মিয়ার ছেলে শহীদুল ইসলাম সাগরের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুক দাবি করে আসছিলেন তার স্বামী। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে পারিবারিক বিরোধের সৃষ্টি হলে কান্তাকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এক মাস পর নিহতের স্বামী শহীদুল কান্তার বাড়িতে গিয়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে তাকে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে তাকে নিয়ে কুয়াকাটার আল মদিনা হোটেলে উঠেন। হোটেলে শহীদুলের ফুফাতো ভাই মামুনকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রী কান্তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর লাশ পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে বক্স খাটের নিচে লুকিয়ে রেখে তারা পালিয়ে যায়। পরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে রুমের বক্সখাটের নিচে মহিলার লাশ দেখতে পায় হোটেল কর্তৃপক্ষ। পরে হোটেল আল মদিনার মালিক সহোদর দুই ভাই দেলোয়ার, আনোয়ার হোসেন ও হোটেল ম্যানেজার আমিরসহ ৩ জন লাশ বস্তাবন্দি করে কুয়াকাটা সাগরে ভাসিয়ে দেন। দীর্ঘদিন মেয়ের খোঁজ না পেয়ে নিহতের বাবা সোহরাব মিয়া মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখানে মেয়ের খবর জানতে চাইলে তারা জানায় তার মেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। একপর্যায়ে কান্তার বাবা সোহরাব মিয়ার সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরে তিনি কান্তার স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ ৫ জনকে আসামি করে নরসিংদীর আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য করার জন্য বেলাবো থানার ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেন।
 
বেলাবো থানা পুলিশ নিহত কান্তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেন এবং আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে সে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক শামীমা পারভিন স্বামী শহিদুলকে আমৃত্যু কারাদণ্ড, তার ফুফাতো ভাই মামুনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। হত্যার পর হোটেল থেকে লাশ গুম করার অভিযোগে হোটেলের মালিক ও ম্যানেজার সহ তিনজনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন।
 
মামলার বাদী সোহরাব হোসেন রতন বলেন, আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করছি। তারপরও আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি আশা করেছিলাম।  
 
রাস্ট্র পক্ষের আইনজীবী (পিপি) এডভোকেট  অলিউল্লাহ বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিচক্ষণতার সঙ্গে মামলাটির রহস্য বের করে এনেছেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতের বিচারক দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছেন। এ রায়ে রাস্ট্র পক্ষ খুশি।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: