ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার নাকাটি হাট শহীদ আঃ জব্বার উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে টাকার বিনিময়ে গোপনে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় খোদ ওই বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক বরাবরে নিয়োগ বাণিজ্য এবং অনিয়মের কথা উল্লেখ করে নিয়োগ প্রদান রোধের আবেদন করেছেন।
অভিযোগ আমলে নিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক পীরগঞ্জের ইউএনওকে তদন্তের নির্দেশনা দিয়েছেন। গতকাল রবিবার এ নির্দেশ হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রমিজ উদ্দীন।
এর আগে গত ২০ ফ্রেরুয়ারী নাকাটি হাট শহীদ আঃ জব্বার উচ্চ বিদ্যালয়ে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ তৈয়বুর রহমান ও হায়দার আলী যৌথ স্বাক্ষর করে জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়টিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ওই বিদ্যালয়টির সিনিয়র শিক্ষক তৈয়বুর রহমান, হায়দার আলী, মুকুল চন্দ্র সহ আরও কয়েকজন আবেদন করেন। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে গোপনে মাসুমা রশিদ নামে এক জুনিয়র শিক্ষককে নিয়োগ প্রদান করেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া গোপন করতে এই তিন শিক্ষককে দেওয়া হয়নি প্রবেশপত্র। জানানো হয় নি পরীক্ষা, কবে, কোথায় ও কিভাবে হয়েছে।
নাকাটি হাট শহীদ আঃ জব্বার উচ্চ বিদ্যালয়ে সিনিয়র সহকারী শিক্ষক তৈয়বুর রহমান অভিযোগ করেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের সভাপতি ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে জুনিয়র একজন শিক্ষককে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে গোপনে নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগ পাওয়া ওই শিক্ষক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মহিলা শিক্ষক প্রতিনিধি। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদে থাকা কাউকে নিয়োগের বিধান নেই। এছাড়াও ফারুক নামে আরেক শিক্ষকের নিকট ওই পদে নিয়োগের আশ্বাসে ১৭ লাখ টাকা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
আরেক শিক্ষক হায়দার আলী বলেন, প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার নিয়োগ পক্রিয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেও তিনি নিয়োগ হয়নি বলে আমাদের জানিয়েছেন। অথচ এখন দেখতেছি নিয়োগ হয়ে গেছে। এই নিয়োগ আমরা মানিনা, গোপনে নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করে পুনরায় নিয়োগ প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসকের দারস্থ হয়েছি। নিয়োগে লেনদেন, অনিয়ম সংক্রান্ত সকল প্রমাণাদি আমরা ডিসি অফিসে জমা করেছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়োগ পক্রিয়া বৈধ দেখাতে গত ২২ ডিসেম্বর নেকমরদ আলিমুদ্দিন কলেজে নিয়োগ পরীক্ষা দেখানো হয়েছে। এখানে ৬ জন প্রার্থী অংশগ্রহণের কথা থাকলেও ১ জন প্রার্থী অনুপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে। ওই বিদ্যালয়ের আরও ৩ জন আবেদনকারী ছিল, এটি সম্পর্কে কোন তথ্য জানাতে পারেনি দপ্তরটি।
তবে নিয়োগ পক্রিয়া স্বচ্ছ দেখাতে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে নিয়োগপত্র দিলেও পরের মাস জানুয়ারিতে স্বপদে যোগদান করে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার কথা সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে সদ্য নিয়োগ পাওয়া মাসুমা রশিদের। হাজিরা খাতায় দেখা গেছে তিনি মার্চের ৩ তারিখ থেকে নিয়োগ পাওয়া পদে স্বাক্ষর করেছেন। জানুয়ারী এবং ফ্রেরুয়ারী মাসে তিনি নিয়োগপত্র পেলেও বিধি মোতাবেক যোগদান এবং হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর না করলে তার নিয়োগপত্র বাতিল হওয়ার কথা বলে জানান পীরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
অনিয়ম ও বানিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ হয়েছে বলে দাবি করেন পীরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুল্লাহ। তিনি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা পরবর্তী কার্যক্রম বিধি মোতাবেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি নিয়োগপত্র দিবেন এবং প্রার্থীকে যোগদান করাবেন। এরপরেও পরবর্তীতে কোন অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে এমপিও পাঠানো বন্ধ করে দিবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যান নাকাটি হাট শহীদ আঃ জব্বার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন ও সভাপতি আজহারুল ইসলাম। তারা বলেন, অভিযোগ যেহেতু করেছে। তদন্ত হউক।
এদিকে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রমিজ উদ্দীন বলেন, নাকাটি হাট শহীদ আঃ জব্বার উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। নির্দেশনা মোতাবেক শ্রীঘ্রই তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের সত্যতা মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: