নওগাঁর নারী সমাজের এগিয়ে যাওয়ার শক্তি ও উৎসাহের বাতিঘর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন পারভীন আকতার। সমাজের পিছিয়ে পড়া, অবহেলিত ও নির্যাতিত নারীদের নতুন উদ্যোমে এগিয়ে নিতে কাজ করে আসছেন পারভীন আকতার। আমাদের সমাজে যে সব নারী তাদের ইচ্ছেশক্তি ও যোগ্যতা দিয়ে নিজেকে সমাজে শীর্ষস্থানে উন্নীত করার গৌরব অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন পারভীন আকতার।
কঠোর পরিশ্রম ও মেধার সমন্বয়ে রাজনৈতিক সফলতা অর্জন করেছেন অপরাজিতা নারী পারভীন আকতার। বর্তমানে তিনি নওগাঁ জেলা পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে জনগণের সেবা করে চলেছেন। একই সঙ্গে নওগাঁ জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে নারীদের রাজনৈতিক অধিকার চর্চার প্লাটফরমকে মসৃন করতে বিরামহীন সংগ্রাম করে চলেছেন।
নওগাঁ সদর উপজেলার বাঙ্গাবাড়িয়া মহল্লার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা নইমুদ্দীন ও মাতা হাসিনা বেগমের সন্তান পারভীন আকতারের জন্ম ১৯৭৭ সালের ১জানুয়ারীতে। ছোট বেলা থেকেই অধিকার আদায়ে সচেতন পারভীনের রাজনীতির প্রতি ছিল চরম ঝোঁক। ১৯৯৩ সালে ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতির জগতে প্রবেশ করেন পারভীন। এরপর থেকে আওয়ামীলীগ এর রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িয়ে রেখেছেন নিজেকে। রাজনীতির পাশাপাশি নিজেকে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করার পথ খুজতে গিয়ে এইচএসসি পাসের পর আর পড়ালেখা করতে পারেননি পারভীন আকতার।
নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার শুরুর দিকে পারভীন আকতার জেলা যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে বøক-বুটিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে “প্রভাতী বুটিকস হাউস” নামের একটি বুটিক শপের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন। তার হাত ধরেই অনেক পিছিয়ে পড়া, নির্যাতিত ও অসহায় নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। নওগাঁ জেলা সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন কালে ২০১২ সালে তিনি অপরাজিতা প্রকল্পের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। এরপর থেকে অপরাজিতা প্রকল্পের ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল কর্মসূচিতে তিনি নিয়মিত অংশ গ্রহন করে জনমানুষের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
তিনি ২০০৯ সালে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হোন এবং ২০১৩ সাল থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়াম্যান এর দায়িত্ব পালন করার পর ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সরাসরি অংশ গ্রহণ করে পরাজিত হলেও কিন্ত তিনি থেমে থাকেন নি। ২০১৯ সালে তিনি আবারও অপরাজিতা প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং ২০১৬ সাল থেকে নওগাঁ জেলা পরিষদ নির্বাচনে নওগাঁ-৪ নং সংরক্ষিত আসন থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
যে সময়ে তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে পা রাখেন সে সময়ে নারীরা সেভাবে ঘরের বাহিরে কাজ করতেন না। পারিবারিক সিদ্ধান্তেও নারীদের মতামত নেওয়া হতো না সামাজিক বিধি-নিষেধের পাশাপাশি শ্বশুর বাড়ির সম্মতি অর্জন ছিল সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। পারভীন আকতার ব্যাংকার স্বামী আব্দুল কুদ্দুসের প্রেরণায় সকল বাধা উপেক্ষা পার করে সমাজকে মাদক মুক্ত করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে নারী ও পুরুষের বৈষম্য দূর করতে কাজ করে আসছেন।
সংসার সামলিয়ে রাজনীতি তারপর বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মূলত অপরাজিতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি নারীর রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার সম্পর্কে অধিকতর সচেতন হয়ে ওঠেন। অপরাজিতা প্রকল্পের সংস্পর্শে এসেই তিনি সমাজের অবহেলিত, অসহায় মানুষের অবস্থান পরিবর্তন করতে শত-শত উঠান বৈঠক করে নারীর রাজনৈতি অধিকার প্রতিষ্ঠায় মানুষকে সচেতন করার কাজ অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান নারী শক্তির উৎস পারভীন আকতার।
জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে তাদেরকে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করে নতুন পরিচয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করে যাবেন বলে জানান পারভীন আকতার।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: