নরসিংদী শহরে পৌরসভার নামে সিএনজি ও অটোরিকশা, ভ্যান, ট্রলি থেকে চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ায় খুশি চালকরা। গত দশ বছর ধরে এসব চালকরা পৌরসভার নামে ১০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা চাঁদা দিতেন বলে জানান।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারী) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের পৌরসভার গোলচত্বর, সদর হাসপাতালের মেইনগেইট, সাটিরপাড়া রজনীগন্ধা চত্বর, আরশিনগর রেলগেইট, বীরপুর সিএনজি স্ট্যান্ড, ভেলানগর বাজার, জেলখানার মোড়, সংগীতার মোড় ও বাসাইল রেলগেইট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যান, ট্রলি থেকে টোকেন দিয়ে এখন আর কাউকে চাঁদাবাজি করতে দেখা যায়নি।
এসব জায়গায় চাঁদাবাজরা টোল বসিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে চোখের সামনে নিয়মিত চাঁদা আদায় করত। সোমবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থ্রি হুইলার, পাসপোর্ট ও সাবরেজিস্টার অফিস থেকে সকল ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভের ডাক দেয় নরসিংদীর সর্বস্তরের জনগন। ওই মানববন্ধন ও বিক্ষোভে নরসিংদী সদর-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো (বীর প্রতীক) এমপির অনুসারীরা চাঁদা বন্ধের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন। মঞ্চ থেকে "যেখানেই চাঁদা সেখানেই প্রতিরোধ" বলে ঘোষণা দেওয়া হলে শহরের দৃশ্যপট পাল্টে যায়। বন্ধ হয়ে যায় চাঁদাবাজি।
একাধিক অটোচালক ও মালিক বলেন, গত ১০ বছর ধরে প্রতিবছরে ৫ হাজার টাকা ও প্রতিদিন ১০ টাকা করে দেওয়া লাগছে। আমরা ১০ বছর ধইরা অটো গ্যারেজের মালিক। তখন থেকেই ১০ টেহা কইরা দিতাম। আর গাড়ি প্রতি ৫ হাজার টাকা কইরা চাঁন্দা নিছে টোকেন কইরা দিবো বইললা।
কারা এ চাঁদা নিচ্ছে এমন প্রশ্নে করলে তারা প্রতিনিধিকে বলেন, কারা চাঁন্দার টাকা নিতো, তা পুলিশ প্রশাসন থাইকা শুরু কইরা সকলেই জানে। আগের মেয়র (সাবেক) কামরুলের লোক দিয়ে তুলতো। আর এহন তুলে আমজাদ হোসেন বাচ্চু মেয়র। সকালে গাড়িটা রাস্তায় বাহির হইলেই আগে চাঁন্দাবাজ গরে ট্যাহা দিতে হইত। না দিলেই লাড়ি দিয়া বারি মাইরা গ্লাস লাইট ভাইঙ্গা লাইতো। প্রতিবাদ করলে মারতে আইতো। আমরা গরীব মানুষ পেটের দায়ে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজ্জা কষ্ট করে গাড়ি চালাই। আজকে মনে হইতাছে দেশটা স্বাধীনতা হইছে।
জাতীয় রিকশা ভ্যান শ্রমিক লীগ ও আওয়ামী মটর চালক লীগের একাধিক নেতার সাথে কথা হলে তারা বলেন, এধরনের চাঁদা অবৈধ। এটা গরীব মারার চাঁদা। এসব চাঁদা বন্ধের দাবিতে আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। পৌরসভার এই অবৈধ চাঁদা বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে তা তিনি আর বন্ধ করেননি। এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন বর্তমান মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চুও। নরসিংদী সদর-১ আসনের মাননীয় এমপি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো (বীর প্রতীক) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচনের পর তিনি চাঁদামুক্ত নরসিংদী গড়বেন। তার এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে আমরা সকলে একমত পোষণ করি এবং সকল ধরনের চাঁদা বন্ধ করতে একযোগে কাজ করছি।
আরও বলেন, বিভিন্ন থানা থেকে নরসিংদী শহরে প্রতিদিন প্রায় ৫/৬ হাজার অটোরিকশা, ভ্যান, সিএনজি ও ট্রলি চলাচল করে। এসব গাড়ি থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। প্রতিমাসে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। এসব টাকার ভাগবাটোয়ারা করেন সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান ও বর্তমান মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চু।
অপরদিকে একই স্বস্তির আভাস মিলছে সাবরেজিস্টার অফিসেও। সেখানেও দলিল লেখক সমিতির নামে দলিল প্রতি ৩ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হতো। প্রতিদিন ওই অফিসে প্রায় শতাধিক দলিল সম্পাদিত হয়। প্রতি দলিল থেকে সমিতির চাঁদা বাবদ নেওয়া হয় ৩ হাজার টাকা। ওই টাকার একটা অংশে ভাগ বসান সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখক প্রতিনিধিকে জানান, আমরা দলিল লেখকরা দলিল প্রতি সমিতিকে ৩ হাজার টাকা দেই। ওই টাকা থেকে একহাজার টাকা পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান মেয়র থাকাকালে থেকেই আমরা তার নামে দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানেও তা চলমান আছে। শুধু তাই নয় অফিসে তার পোষ্য সদর সাবরেজিস্টার দলিল লেখক সমিতির সদস্য সচিব মামুন ভূঁইয়া ওরফে মামুন মেম্বারকে দলিল দাতাদের টিপসই দেওয়ার জন্য আলাদাভাবে তাকে দিতে হয় দুইশত টাকা। এই অফিসে প্রতিদিন প্রায় একশোর ওপরে দলিল হয়ে থাকে।
এখন চাঁদা নেওয়া হচ্ছে কি'না জানতে চাইলে প্রতিনিধিকে বলেন, নরসিংদী সদর-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো (বীর প্রতীক) সাবরেজিস্টার অফিসে দলিল লেখকদের কাছ থেকে ব্যক্তি নামে চাঁদা আদায় বন্ধ করতে নির্দেশ দেন। এরপর থেকেই হঠাৎ করে অফিসের চেহারা পাল্টে যায়। ৩/৪ দিন ধরে অফিসে সকল ধরনের চাঁদা বন্ধ আছে বলেও জানান।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: