গৌরীপুরে বিষমুক্ত রঙিন ফুলকপি, বাঁধাকপি আর ব্যতিক্রমী ফুল উৎপাদন করেছেন মডেল কৃষক মো. শহীদুল্লাহ (৪৮)। ধানের চেয়ে সব্জি উৎপাদনে লাভ ১০গুণ এবং উৎপাদন খরচ এক হলেও রঙিন সবজিতে লাভ হয় দ্বিগুণ।তিনি স্বল্প সময়ে অধিক ফলন ও পরিত্যক্ত জমির শতভাগ ব্যবহার, একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের তাঁতকুড়া গ্রামের আবুল হাসিমের পুত্র শহীদুল্লাহ।
গবেষণায় বলছে, রঙিন সব্জিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ক্যান্সারের সেল বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে রঙিন সব্জির রয়েছে বাজারে ব্যাপক চাহিদা এবং মূল্যও দ্বিগুণ।
কৃষক মো. শহীদুল্লাহ জানান, এ বছর ২৫শতাংশ জমিতে সাদা রঙের ফুলকপি, ২০শতাংশ জমিতে রঙিন ফুলকপি ও ১৫ শতাংশ জমিতে রঙিন বাঁধাকপি চাষ করেছেন। সাদা রঙের ফুলকপি ও রঙিন ফুলকপি’র উৎপাদন খরচ একই। কিন্তু সাদা রঙের ফুলকপি ৩০-৪০টাকা দরে বিক্রি করলেও রঙিন ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০টাকা থেকে ৮০টাকা দরে। এ জমিতে ধান উৎপাদন করে যে লাভ হতো শাকসব্জিতে তার চেয়ে ১০গুণ বেশি লাভ। তিনি কোনো ফসলেই ব্যবহার করেন না কিটনাশক। ব্যবহার করেন নিজের উৎপাদিত জৈব সার আর কেচো সার। এবার লাল বাঁধাকপি চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন। গত ২বছর যাবত তিনি রঙিন বাঁধাকপি চাষ করছেন। সম খরচে অধিক লাভের কারণে প্রতিবেশী কৃষকদের মাঝেও ব্যাপক উৎসাহ ও সাড়া পড়েছে।
কৃষক শহীদুল্লাহ জানান নিয়মিতভাবে আলু, শশা, ডাটা, লাউ, ঢেড়শ, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, ফুলকপি,বাধাকপি,বেগুন, মরিচ, টমেটো, শিম, ক্যাপসিকাম, মিষ্টি কুমড়া, সরিষা সহ মৌসুমী শাকসব্জি নিয়মিত চাষ করেন। বাড়ির পাশের ১০শতাংশ জমিতে ফুল চাষ করে প্রায় ৭০হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।
এ ব্যপারে উপসহকারী কৃষি অফিসার সুমন চন্দ্র সরকার জানান, মো. শহিদুল্লাহ হলেন ভ্যরাইটিজ কৃষক। এ উপজেলায় তিনিই প্রথম রঙ্গীন বাঁধা কপি, ফুলকপি ও ফুল চাষ করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি জানান, রঙিন ধরণের শাকসব্জির প্রতি কৃষক শহীদুল্লাহ’র আগ্রহ অনেক বেশি। আমরা কৃষকের মাঝে তথ্য-প্রযুক্তির নতুনত্ব পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। রঙ্গীন সব্জিতে রয়েছে ভিটামিন সি, ই, কে, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যারোটেনেয়ড।এসব সব্জি ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। নিয়মিত বাঁধাকপি খেলে রক্তচাপ কমে, হজমশক্তি বাড়ায়, প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।ইউরোপিয়ান জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, বাঁধাকপির জুস স্তন ক্যান্সারের সেল বৃদ্ধি কমায়। বয়োঃসন্ধির সময় নিয়মিত বাঁধাকপির রস খেলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ৭২ শতাংশ কমে যায়। প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধেও বেশ কার্যকরী। জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট জার্নালের এক গবেষণা অনুসারে, বাঁধাকপিতে থাকা আইসোথিয়োকানেটস ও ক্যারোটিনয়েডস উপাদান ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। রঙিন প্রত্যেকটি শাক-সব্জিতে কম-বেশি হলেও এ ধরণের খাদ্যগুণ রয়েছে।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: