গেল তিনদিন তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আর তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নীচে নেমে যাওয়ায় পাবনা জেলার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।
কিন্তু সরকারি সেই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ঈশ্বরদীর সরকারি সাড়া মাড়োয়ারী মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজে বুধবার বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল জব্বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাহফুজা সুলতানসহ আরও অনেকে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি গণমাধ্যমে।
তবে জেলা শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালী বলেন, পাবনা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে হয়তো অনুষ্ঠানটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পূর্ব নিধারিত ছিল। বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।
অপরদিকে ঈশ্বরদী উপজেলার সরকারি সাড়া মাড়োয়ারী মডেল হাইস্কুল এন্ড কলেজেও এমনটি হয়েছে। তীব্র শীত আর কনকনে বাতাস উপেক্ষা করেই প্রতিষ্ঠানটি বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পাবনা-৪ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য গালিবুর রহমান শরীফকে উষ্ণ অভ্যর্থনা আর ফুলের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম শাহীনের সভাপতিত্বে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় ও ক্রীড়া পতাকা উত্তোলন করে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য গালিবুর রহমান শরীফ।
এ সময় ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাস, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ওহিদুজ্জামান, পৌর মেয়র ইসাহক আলী মালিথা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালামসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে ক্লাস বন্ধ রাখার নির্দেশনা উপেক্ষা করেই বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, এমপি সাহেব, ইউএনও, পৌরমেয়রসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অতিথি থাকায় এই আয়োজন করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতি নেয়া আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, যাদের অনুমতি নিবো তারা তো আমার এখানে অতিথি। মৌখিকভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বলা আছে।
একাধিক অভিভাবক ও সচেতন মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারি নির্দেশনা প্রকাশ্যে অমান্য করা হলো। জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে বাহবা নেয়ার জন্য এমন অমানবিক কাজ কিভাবে করতে পারেন। আজ ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা বিরাজমান। সেখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুলে এনে কাজটা মোটেও ভালো হয়নি বলে মন্তব্য করেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবীর কুমার দাসের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পাবনায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নেমে আসায় সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক গেল তিনদিন পাবনার সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ ঘোষনা করা হয়। পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা ও জেলা শিক্ষা অফিসার রোস্তম আলী হেলালী স্বাক্ষরিত পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যালয় বন্ধের এই নির্দেশনা জারি করা হয়।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: