ময়মনসিংহের নান্দাইলে বিদ্যুস্পৃষ্ঠে একই পরিবারের চার জনকে এক সাথে দাফন করা হয়েছে।
রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় নান্দাইলে চন্ডিপাশা ইউনিয়নের ঘোষপালা নিজ গ্রামে একই পরিবারের চার সদস্যের জনের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ অংশ নেয়।
জানাজার পরে জামালের বাড়ির চারপাশ লোকারণ্য হয়ে যায়। জানাজা শেষ হওয়ার পর একে একে চারজনের মরদেহ চারটি কবরে নামানো হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন হাতে করে মাটি নিয়ে কবরে ফেলছে। আবার কেউ কেউ অশ্রুসিক্ত চোখে হাত দিয়ে কবরের মাটি সমান করে দিচ্ছিলেন।
গতকাল শনিবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠে হয়ে এক পরিবারের ৪ জন নিহত হন। তারা হলেন, উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের ঘোষপালা গ্রামের বাসিন্দা অটোচালক জামাল উদ্দিন (৩২) তার মা আনোয়ারা বেগম (৬৫) শিশু কন্যা আনিকা আক্তার (৪), মোছা. ফাইজা (৬)।
জানাযায় আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জামাল উদ্দিন খুবই গরিব মানুষ। পৌরসভায় থাকবো এলাকায় ৮ শতাংশ জমি কিনে একটি টিনশেট ঘর করে অটো চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। একটি দুর্ঘটনায় যে এভাবে এক পরিবারের ৪ জন মারা যাবে তা কখনও ভাবতে পারিনি।
স্থানীয়রা জানান, জামাল উদ্দিন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ৩ মেয়ে স্ত্রী ও মাকে নিয়ে তার সংসার। স্ত্রী মরিয়ম বেগম ঢাকায় একটি হাসপাতালে আয়া পদে কাজ করতো। তিন মেয়ে ও মাকে নিয়ে জামাল উদ্দিনে বাড়িতে থাকতো৷ গতকাল শনিবার অটোরিক্সা চার্জ থেকে বের করা সময় বিদ্যুতায়িত হন। তার আত্নচিৎকারে দুই শিশু কন্যা ও বৃদ্ধা এগিয়ে এলে তারাও ঘটনাস্থলে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান। বাড়ির বাহিরে থাকা মারফা আক্তার (৮) নামের বড় মেয়েটা বেঁচে যান।
জামাল উদ্দিনের স্ত্রী মরিয়ম আক্তার ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি করেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। স্বামী সন্তানদের মৃত্যুর খবর পেয়ে গতকাল রাতে বাড়ি আসেন তিনি। মরিয়ম বলেন, স্বামী-স্ত্রীর আয় দিয়ে জমি কিনেছিলাম। সেই জমিতে বাড়ি বানাতে পারেননি। এখন তাঁকে ছেড়ে সবাই চলে গেলেন। তাঁর তো কেউ রইল না। এ কথা বলে কাঁদতে কাঁদতে তিনি মূর্ছা যান।
নিহত জামালের বড় মেয়ে জান্নাতুল মারুফা জানায়, গতকাল দুপুরের পর ঘরে ঢুকে দেখতে পায় বাবা, দাদি ও ছোট দুই বোন ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে আছে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। তখন সে দাদির শরীরে ধাক্কা দেয়। এ সময় সে (মারুফা) প্রচণ্ড ঝাঁকি খেয়ে ঘরের এক কোণে গিয়ে ছিটকে পড়ে। তখন দাদি বলে চিৎকার করতে থাকলে কিছুটা দূরে পুকুরে গোসলরত বড় চাচা নুরুল হক ছুটে আসেন।
জামালের ভাই নুরুল হক জানান, জান্নাতুলের চিৎকার শুনে ঘনে এসে দেখেন চারজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছেন। তখন শুকনা বাঁশ দিয়ে আঘাত করে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করেন। বিদ্যুৎ সংযোগ হওয়ার পর ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান তাঁর মা, ছোট ভাই ও দুই ভাতিজির কেউ বেঁচে নেই। তাঁর ধারণা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর একে অপরকে বাঁচাতে গিয়ে সবাই প্রাণ হারিয়েছেন।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
জনপ্রিয় খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: