বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে লড়াই করছে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন মহল। এখন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাহসী স্কুলছাত্রীদের নিজের বাল্যবিয়ে নিজে রোধ করার উদাহরণ অহরহ। বাল্যবিয়ে হচ্ছে— এমন খবর পেলেই ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে খবর যাচ্ছে, সেই বিয়ে বন্ধও হচ্ছে।
কিন্তু একি কাণ্ড ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বাঁচোর ইউনিয়নের ? এখানকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) তুলা রায় অষ্টম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে (১৪) পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছেন।
বিয়ের ছবি সামাজিকগনমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে ওই এলাকার সচেতন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছে, একজন ইউপি সদস্য যেখানে বাল্যবিয়ে ঠেকাবেন, সেখানে ইউপি সদস্য তুলা রায় নিজে অপরাধমূলক কাজ করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সদ্য বিয়ে করা জুই রাণী উপজেলার রাতোর ইউনিয়নের গোবিনাথপুর গ্রামের সুঠিন চন্দ্র রায়ের মেয়ে। ওই শিক্ষার্থীকে নানাভাবে ফুসলিয়ে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন ইউপি সদস্য তুলা রায়। এর পর ওই ইউপি সদস্য গোপনে বিয়ে করেন। বর্তমানে তারা আত্নগোপনে রয়েছেন। ১৪ বছর আগে তুলা রায় প্রথম বিয়ে করেন। তার স্ত্রী ও দুই স্কুল পড়ুয়া সন্তান রয়েছে।
বাল্যবিয়ের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম দরিদ্রতা, যৌতুক, সামাজিক প্রথা, সামাজিক চাপ, অঞ্চলভিত্তিক রীতি, নিরক্ষরতা ইত্যাদি। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ভূমিকার কথা উল্লেখ রয়েছে। বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭ তে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়, ‘সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের নিমিত্ত, জাতীয়, জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা এবং স্থানীয় পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তির সমন্বয়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন এবং উহাদের কার্যাবলি নির্ধারণ করিতে পারিবে।’
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, একজন জনপ্রতিনিধি তাঁর কর্তব্য পালন না করে বাল্যবিয়ে করে অপরাধ করেছেন। তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাল্যবিয়ে করা ইউপি সদস্য তুলা রায়ের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এবিষয়ে রাতোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরৎচন্দ্র রায় বলেন, বাল্যবিয়ে করা দণ্ডনীয় অপরাধ। ইউপি সদস্য বাল্যবিয়ে করার বিষয়টি আমরা জানতে পেরে উভয় পক্ষকে ডাকা হলে কোন সারা পাইনি। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসিকে জানানো হয়েছে।’
বাঁচোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
জীতেন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, এমন ন্যক্কারজনক ঘটনাটির আমি ধিক্কার জানাই, আমরা স্থানীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো'।
রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন,‘বিষয়টি লজ্জাজনক। 'অভিযোগ পেলে ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: