মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও স্থলবন্দর সংলগ্ন ‘নাকুগাঁও বধ্যভূমি’র অধিকাংশ জায়গা পাশে বয়ে চলা ভোগাই নদী গর্ভে বিলিন হতে চলেছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও অযতœ আর অবহেলায় পড়ে আছে বাংলাদেশ অংশের নাকুঁগাও বধ্যভূমি।
বধ্যভুমির ওই জায়গাটি নোম্যান্স ল্যান্ড হওয়ায় বাংলাদেশ অংশে কোন প্রকার স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়নি। তবে একই স্থানের ভারত অংশে স্মৃতিফলক নির্মাণ করেছে ভারতীয়রা। তাই দুই দেশের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে সরকারীভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ করার জন্য জোড় দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর সংলগ্ন ভারত সীমানার কাঁটাতারের বেড়াঘেঁষে ২০ শতাংশ জমিতে অবস্থিত এই নাকুগাঁও বধ্যভূমি। এর বেশিরভাগ জায়গা এখন পাশ দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি খরস্রোতা ভোগাই নদী গর্ভে বিলীন হতে চলেছে। যে অংশটুকু রয়েছে তাতেও কখনো খড়ের গাদা, ঝোপঝাঁড় আবার কখনো গরু ছাগল বিচরণ করতে দেখা যায়। ১৯৭১ সালের ২৫ মে। এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বর্বরোচিত হামলা চালায় নাকুগাঁও সীমান্তের স্থলবন্দর এলাকায়। পাকহানাদার বাহিনী অতর্কিতভাবে গণহত্যা চালিয়ে ঘণ্টা খানিকের মধ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে। পরে নিহতদেরকে ওই বধ্যভুমিতে গণকবর দেওয়া হয়। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও নাকুগাঁও বধ্যভুমিকে রক্ষার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্নস্থানে এসব বীর শহীদদের স্বরণে স্মৃতিস্তম্ব বা স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হলেও অযতœ আর অবহেলায় পড়ে আছে নাকুগাঁও বধ্যভূমিটি।
এই বধ্যভূমির পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা শ্রী রাজকুমার বলেন, আমি দেখেছি এখানে পাকহানাদার শত্রুরা অনেক মানুষ হত্যা করার পর এখানে তাদের গণকবর দেওয়া হয়েছে। এই জায়গাটি একদম ভারত সীমানাঘেঁষা তথা নোম্যান্স ল্যান্ড হলেও গত কয়েক বছর আগে ভারত অংশেরটুকুতে তারা স্মৃতিফলক নির্মাণ করেছে। ওই সময় বাংলাদেশের অংশে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হলে কোন সমস্যা হতো না। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে এই বধ্যভূমির স্মৃতিফলক নির্মাণের জন্য জরুরী উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইলিশায় রিছিল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত নাকুগাঁও বধ্যভূমির জায়গাটি পরিদর্শন করেছি। আন্তর্জাতিক আইনে নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় কোন স্থাপনা নির্মাণ করার অনুমতি নেই। তারপরও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় ওইস্থানের পাশেই স্মৃতিফলক নির্মাণের প্রয়াজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: