দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নরসিংদী সদর-১ আসনের নির্বাচনী মাঠ ক্রমশই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দলীয় প্রার্থী ও নৌকাকে ডুবাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু পদধারী নেতারা উঠে পড়ে লেগেছে। রীতিমতো তারা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
অপরদিকে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও তাদের সমর্থকদের ভোট ও সমর্থন আদায় করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ কামরুজ্জামান কামরুল। রয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে তার যোগসাজশ। সম্প্রতি তিনি শহরের শাপলা চত্বরে তার অস্থায়ী কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় বিএনপি থেকে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানদের কথা উল্লেখ করেন। তার এই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে করে নৌকার সমর্থক ও দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
গত ২৯ নভেম্বর দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো (বীর প্রতীক) এর নৌকা'র সমর্থনে মতবিনিময় সভায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন তার বক্তব্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উদ্দেশ্য " মাইরের উপর ঔষধ নাই" বক্তব্য প্রদান করেন।
তার বক্তব্যটি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর পরিপন্থী বলে পরের দিন বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ ওমর ফারুক বাদী হয়ে নরসিংদী মডেল থানায় ছাত্রলীগ সভাপতি রিমনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওমর ফারুকের করা মামলায় ১ ডিসেম্বর(শুক্রবার) দুপুরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন। ওই মামলায় জেলা ছাত্রলীগ নেতা রিমন বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
এরই জের কাটতে না কাটতেই ৬ ডিসেম্বর (বুধবার) স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ কামরুজ্জামানকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভায় মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম, ‘নৌকা যারা পলাইবার জায়গা পাবে না। নৌকার প্রার্থী হিরো পলাইবার জায়গা পাবে না' বলে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন, আজ থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ব্যাপক জাগরণের সৃষ্টি হয়েছে। কামরুল ভাইয়ের জন্য নামছি। এখানে কারও বাঁধার সৃষ্টি হবেনা। এখন হিরো'র লোকেরা পলানোর সুযোগ পাবে না। আমরা প্রত্যেকে কামরুল ভাইয়ের জন্য মাঠে নামবো (ইনশাআল্লাহ)। যতই প্রগান্ডা করুক, নৌকা যারা পলাইবার জায়গা পাবে না এসব বলে বক্তব্য প্রদান করেন। তার এই বক্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এমন বক্তব্যে টক অব দ্যা টাউন এ পরিণত হয়। শহর জুড়ে গুনজন আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে আওয়ামী লীগের নৌকার বিরুদ্ধে বক্তব্য। এ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠলে মোহাম্মদ রাজিব কর্তৃক সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর লংঘন দায়ে নির্বাচন কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৭ডিসেম্বর) সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরিন মাধবদী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মোঃ সিরাজুল ইসলামকে শোকজ করেন।
সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয় যে, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ কামরুজ্জামানের পক্ষে মতবিনিময় সভায় আপনার বক্তব্য প্রদানের একটি ভিডিও চিত্র গণমাধ্যম সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বক্তব্যের একপর্যায়ে আপনাকে নৌকার লোক পালাবার জায়গা পাবে না বলতে শোনা যায়। যা একটি নির্দিষ্ট দলীয় প্রতীকের সমর্থকদের হুমকি প্রদানের সামিল এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ১১ এর সুস্পষ্ট লংঘন। এ ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদানে নিদিষ্ট দলীয় প্রতীকের সমর্থকদেরকে হুমকি প্রদান করার কারণে এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ১১(ক) লংঘন করায় আপনার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা ২ দিনের মধ্যে উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে কারণ দশানো নির্দেশ দেওয়া হইলো বলে উল্লেখ করেন।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: