ঘোড়াঘাটে বাড়ির আঙিনায় পুষ্টি বাগান

মনোয়ার বাবু, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি | ৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:১৪

বাড়ির উঠানে লাগানো পুষ্টি বাগান থেকে সবজি সংগ্রহ করছেন এক নারী।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলাতে ২৯৮ পরিবার তাদের বসতবাড়ির আশে-পাশে পতিত জমিতে বিভিন্ন রকম সবজি চাষ করে নিজেদের পুষ্টি চাহিদা নিজেরাই পূরণ করছে।

সোমবার (৪ ডিসেম্বর) উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে কিংবা আশেপাশে দেড় শতক জায়গায় বাঁশের খুটির সাথে জাল(নেট) দিয়ে বেড়া দেওয়া। তার মধ্যে সারি সারি করে ১০-১২টি বেড করা। বেডগুলোর কোনটিতে লালশাক, ধনিয়াপাতা, কলমিশাক ও বাঁধা কপি,ফুলকপি, কোনটিতে লাগানো হয়েছে, পিঁয়াজ, রসুন, বেগুন,কাঁচামরিচ। আবার ঝাংলায় ঝুলছে পুঁইশাস আর লাউশাস।

পৌর এলাকার নবাব আলী বলেন, পেশায় আমি একজন ভ্যান চালক। সাত মাস আগে বাড়ির পাশে লাউ, পেঁপে, মরিচ ও আদা চাষ করেছি। বসতভিটার এই বাগান থেকে শাক-সবজি থেকে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারছি। এমনকি অতিরিক্ত কিছু বিক্রি করে আয়ও করছি।’

একই গ্রামের রত্না খাতুন জানিয়েছেন, এখন তারা বসতবাড়ির একটু জায়গাও অলসভাবে ফেলে রাখেন না। বসতভিটাটি তারা বাগানের জন্য ব্যবহার করছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো আবাদযোগ্য জমি বা বসতভিটায় বিশাল জায়গা নেই। তাই আমাদের বাড়ির ছোট্ট জায়গাটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করছি। শাকসবজি ও নানা রকম ফল ফলাচ্ছি যা আমাদের পরিবারে পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছে।’

‘শাকসবজি, ফলমূল বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয় বলে আমরা সাধারণত সেগুলো কিনে খেতে পারি না। আমরা যদি বসতভিটাকে বাগান হিসাবে তৈরি না করতাম তাহলে এসব খাওয়া আমাদের সম্ভব হতো না’, জানালেন ৪নং ইউনিয়নের  গোলশানআরা নামের আরেক গৃহিণী। তিনি আরও বললেন, ‘সারা বছর বসতভিটায় কিভাবে শাকসবজি, ফলমূল চাষ করতে হয় তা আমরা জানতাম না। সে কারণে ফাঁকা জায়গাগুলো অলস হয়ে পড়ে থাকতো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে অ্যাকশন এইড নামের একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর  'জলবায়ু সহনশীল স্থায়িত্বশীল কৃষি চর্চা অবলম্বনে' (WSFL)  প্রকল্পের আওতায় আমরা বসতভিটাকে বাগান হিসেবে ব্যবহার করে আসছি।

অ্যাকশন এইডের সুপারভাইজার রফিকুদৌল্লা বলেন, ‘নারীরা বসতভিটায় কিভাবে শাকসবজি ও ফলের বাগান তৈরি করে পরিচর্যা করবেন সে সম্পর্কে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমরা বিনামূল্যে বীজ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিই। আমরা বাগান পর্যবেক্ষণও করি। এছাড়া বসতভিটার বাগান থেকে দরিদ্র মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। এমনটি জানিয়ে তিনি আরও বলেন,এখন প্রায় প্রত্যেকটি বসতভিটা এক একটি সবজি বাগানে পরিণত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘কিভাবে বসতভিটার খালি জায়গায় শাকসবজির বাগান তৈরি করতে হবে সে বিষয়ে এনজিওর পাশাপাশি আমরাও ধারণা দিয়ে থাকি।’

আমাদের গ্রামঞ্চলে বাড়ির আশে-পাশে যেসব জায়গা পড়ে থাকে সেসব জায়গায় বিভিন্ন রকম সবজি চাষ করে আমরা যেমন আমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারি তেমনি বাজারে বিক্রি করে নগদ অর্থও পেতে পারি। আর এটা করতে পারলে গ্রামাঞ্চলের বিপুল জনগোষ্ঠির দারিদ্র্য বিমোচন করাও সম্ভব হবে। নির্ভেজাল সবজি এবং পুষ্টির চাহিদা পূরনে বসতবাড়ির আশে-পাশে সবজি চাষের কোন বিকল্প নাই।

‘অতি দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে পুষ্টি সহায়তা করার ক্ষেত্রে বসতভিটায় বাগান ভুমিকা রাখছে বলে যোগ করেন তিনি।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: