ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) মুক্তিজোট থেকে প্রার্থী হয়েছে রোকেয়া বেগম নামে স্বামী পরিত্যক্তা নারী।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) মনোনয়ন বাছাইয়ে তিনি এমপি প্রার্থী হিসাবে টিকে আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের বোয়ালমারা গ্রামের মোছা. রোকেয়া বেগম। স্বামী ফারুক দীর্ঘদিন আগে ২ সন্তানসহ রোকেয়াকে ছেড়ে চলে যান। সরকারি খাস জায়গায় ছোট্ট একটি কুড়ে ঘরে বৃদ্ধ মা আছিয়া খাতুন ও ১ ছেলে ও ১ মেয়েকে নিয়ে রোকেয়ার বাস। অভাবেব সংসারে তিনি হালুয়াঘাট পৌর শহরের একটি ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে পরিচ্ছন্নতা কর্মী (ঝাগুদার) হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু সেই ডায়াগনোস্টিক সেন্টারটি বন্ধ হয়ে গেলে সেখান থেকে চাকুরীর সুবাদে বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ডাক্তারের বাসা বাড়িতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিভিন্ন পরিচিত রোগীদের ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করান। এভাবেই চলছে তার সংসার।
তবে হঠাৎ করেই তার দোলাভাই এর কথায় ও আর্থিক সহযোগীতায় তিনি গণমুক্তি জোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে এমপি পদে প্রার্থী হয়েছেন। এনিয়ে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা সমালোচনা। যেখানে নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী কিভাবে তাকে করা হয়েছে তার উত্তর জানে না তার এলাকার সাধারণ মানুষ।
বোয়ালমারা এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ আব্দুল মালেক বলেন, রোকেয়ার স্বামী দীর্ঘদিন আগে তাকে রেখে চলে যায়। অভাবের কারণে যেখানে তার সংসার চলেনা সেখানে সে কিভাবে এমপি প্রার্থী হয়েছে তা আমার জানা নেই। তাকে কোনদিন রাজনীতি বা জনসেবা করতেও দেখি নাই।
আরেক বাসিন্দা শহিদ মিয়া বলেন, আমার জানা মতে সে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে চাকুরী করে। সকালে বের হয়, রাতে বাসায় ফিরে। নিজের কোন থাকার জায়গা নেই। সরকারি খাস জায়গায় ছনের ঘরে থাকে। তার মনে কিভাবে এমপি হওয়ার খায়েস জাগলো তা আমি জানিনা। কোনদিন আমাদের বলেও নাই। এলাকায় কোন গ্রহণ যোগ্যতা নেই, মাঠে অবস্থান নেই, এভাবে চাইলেও যে এমপি প্রার্থী হওয়া যায় তা দেখে আমরা এলাকাবাসী সত্যিই খুব অবাক হয়েছি।
মোছা. রোকেয়া বেগমের বৃদ্ধ মা আছিয়া খাতুন বলেন, আমার মেয়ে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তার দুলাভাই (ময়মনসিংহ-৪ আসনে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে মনোনীত এমপি প্রার্থী হামিদুল ইসলাম) তাকে এমপি পদে দাড় করিয়েছে। তারাই সকল খরচ দিবে। আমরা এতো টাকা কোথায় পাবো। আমার মেয়ের কষ্টের টাকায় ২ বেলা খেয়ে বেঁচে আছি।
এ বিষয়ে গণমুক্তি জোট এর মনোনীত প্রার্থী মোছা. রোকেয়া বেগম বলেন, আমি আগে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে ইনসাফ ডায়াগোস্টিক সেন্টারে চাকুরী করতাম। বর্তমানে এখানে সেখানে কাজ করে সংসার চালাই। গত ২৮ তারিখ আমাকে প্রার্থী হওয়ার জন্য আমার আত্মীয় ময়মনসিংহ সদর আসনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টির এমপি প্রার্থী হামিদুল ইসলাম অনুরোধ করেন। আমার সকল খরচ তিনিই বহন করেন। আমি উনাকে বলেছিলাম আমি তো আওয়ামীলীগের কর্মী। এ ক্ষেত্রে আমার কোন সমস্যা হবে কিনা?
তিনি বলেন, আমরা আওয়ামীলীগের সাথেই আছি, তোমার কোন সমস্যা নেই। পড়ে আমার সকল কাগজপত্র তিনিই রেডি করে আমাকে প্রার্থী হতে সহযোগীতা করেন। আমার নির্বাচনের সকল খরচ উনারাই দিবেন। আমি নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকবো।
এ বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে মনোনীত এমপি প্রার্থী হামিদুল ইসলাম বলেন, রোকেয়া খাতুন সম্পর্কে আমার শালিকা। আমি তাকে এমপি হওয়ার জন্য বলি এবং সকল সহযোগীতা করি। তাছাড়া গণমুক্তি জোট আওয়ামীলীগের শরীক দল হিসেবে রয়েছে। তাদের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। তাই আমি আমার শালিকাকে প্রার্থী করেছি। এ বিষয়ে আমি সকলের সহযোগীতা চাই।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
জনপ্রিয় খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: