দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গ করে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমনকে গ্রেপ্তার করেছে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত ২৯ নভেম্বর (বুধবার) নরসিংদী-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উদ্দেশে ‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই’ বলে বক্তব্য প্রদান করেন।
তার বক্তব্যটি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এবং সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর পরিপন্থী বলে বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ ওমর ফারুক বাদী হয়ে নরসিংদী মডেল থানায় ছাত্রলীগ সভাপতি রিমনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
অপরদিকে একইদিনে একই ধারায় নরসিংদী-১ এর নির্বাচনী ইলেকটোরাল ইনকোয়ারী কমিটির সদস্য ও যুগ্ম জেলা জজ নাহিদুর রহমান নাহিদ আহসানুল ইসলাম রিমনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কেনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওমর ফারুকের করা মামলায় শুক্রবার দুপুরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমনকে গ্রেপ্তার করেন। পরে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালত মোঃ মাহমুদুল হাসান খান এর আদালতে হাজির করেন। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরন করেন।
এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রেপ্তার হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আদালত ও এর আশপাশের এলাকায় কয়েক হাজার ছাত্রলীগ নেতাকর্মী জড়ো হোন। এসময় জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগ নেতা রিমনের মুক্তির দাবীতে ডিসি রোডে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পুলিশি পাহারায় প্রিজন ভ্যানে রিমনকে আদালত থেকে জেল হাজতে নেওয়া হয়।
কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নেতা বলেন, তার বক্তব্যটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ছাত্রলীগের অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনা ও দলের প্রতি অধিক ভালোবাসার কারণেই বক্তব্যটি দেওয়া হয়েছিলো। যারা দলের ভিতর থেকে দলের ক্ষতি সাধন করে বা করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি দিয়েছেন। আমার মনে হয়, তিনি হয়তো (জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি) ওইসময় ভূলে গিয়েছিলেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা। ভূল মানুষে হয়। তাকে এভাবে গ্রেপ্তার করা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মেনে নিতে পারে না। আরেক ছাত্রনেতা বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রেপ্তার হয়েছে, তা মেনে নিতে পারছিনা। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রাণের সংগঠন, প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা-সংগ্রামে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ওই সংগঠনের নেতাই আজ কারাগারে শুনতে অবাক লাগছে। ছাত্রলীগ স্বাধীনতার ও দলের কথা চিন্তা করে। যারা দলের নাম ব্যবহার করে আখের গুছিয়েছেন, তারাই এখন দলের বিরুদ্ধে গিয়ে দলের ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন। একজন বঙ্গবন্ধুর সৈনিক ও ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে তা মেনে নিতে পারেনা।
তিনি আরও বলেন, যদি আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে থাকেন, তাহলে তাকে আত্মসমর্পণ করার সুযোগ দেওয়া যেতে পারতো। আমাদের একটাই দাবি আমাদের নেতার মুক্তি চাই।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ রবিউল আলম বলেন, নিবার্চনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে ঊসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ ওমর ফারুক বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন। একই সাথে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
তিনি আরও বলেন, এমন বক্তব্য হুমকি-ধমকি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে। নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খোকন চন্দ্র সরকার বলেন, নরসিংদী মডেল থানার মামলার প্রেক্ষিতে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অপরদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে শনিবার সকালে শহরের উপজেলা মোড়ে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সকল ইউনিটের পক্ষ থেকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা যায়।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: