৫১ কোটি টাকায় নৌকার মনোনয়ন: ত্রিশালের স্বতন্ত্রপ্রার্থী আনিসের ভিডিও ভাইরাল

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি | ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ২২:২৩

৫১ কোটি টাকায় নৌকার মনোনয়ন: ত্রিশালের স্বতন্ত্রপ্রার্থী আনিসের ভিডিও ভাইরাল
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৭ ত্রিশাল আসনে স্বতন্ত্র এমপি পদপ্রার্থী সাবেক পৌর মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামান আনিসের একটি বিতর্কিত বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে জেলা ও ত্রিশাল উপজেলাজুড়ে।
 
এ নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছে খোদ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। তারা বলছে, আনিসের বিরুদ্ধে দলের ভাবমূর্তি ক্ষন্ন করার অপরাধে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক।
 
দুই মিনিট ২৪ সেকেন্ডের ঐ ভিডিওতে দেখা গেছে, বুধবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ত্রিশাল উপজেলার ২নং বইলর ইউনিয়ন মোড়ে এক পথসভায় জনসম্মূখে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন মাদানী ও দলের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেন বক্তব্য রাখেন আনিস।
 
ভিডিওতে জনসাধারণকে উদ্দ্যেশ করে তাকে বলতে দেখা যায়, আপনারা কোনদিন শুনেছেন, আমাদের জাতীয় সংসদ সদস্য (রুহুল আমিন মাদানী) গত ১৫ বছরের মধ্যে কোন একটা প্রজেক্ট চাইছে একনেকে, কোনদিন শুনছেন? আজকে যদি পঞ্চাশ লাখ, এক কোটি টাকা খরচ করে ত্রিশাল উপজেলার প্রত্যেকটি রাস্তার ইস্টিমেট করে একনেকে তুলতে পারি তবে দুই হাজার তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আনতে পারবো। তিনি বলেন, ১২ টা ইউনিয়ন ও একটি থানা নিয়ে আমার উপজেলা। সুতরাং আমি আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, আগামী পাঁচ বছর আমার লাগবে না, তিন বছরের মধ্যেই আমি ত্রিশালের সমস্ত রাস্তাঘাটের কাজ শেষ করতে পারবো। মসজিদ-মাদ্রাসা নিয়ে আনিস বলেন, আমার ওলামা একরাম যারা আছেন, তারা আমাকে চিনেন, আমি আপনাদেরকে এখান থেকে কথা দিতে পারি, আমার ত্রিশালে আজ সাড়ে পাঁচশত মসজিদ আছে। সরকার একজন সংসদ সদস্যকে প্রতিবছর দেড় কোটি টাকা দেন শুধু মসজিদের জন্য। মসজিদ-মাদ্রাসার জন্যও টাকা দেন, আপনারা কি পেয়েছেন, আমি তা জানি না, তবে আমি যদি সংসদ সদস্য হতে পারি ইনশাল্লাহ ত্রিশালের সবগুলো মসজিদের দায়-দায়িত্ব আমি নিতে পারবো।
 
মসজিদ-মাদ্রাসার টাকা আত্বসাৎ প্রসঙ্গে আনিস বলেন, গতকালকে কোনাপাড়া থেকে লোকজন এসেছিল, কোনাপাড়া ঈদগাহ মাঠ এবং মাদ্রাসাতে আমাদের সংসদ সদস্য (রুহুল আমিন মাদানী) গিয়েছিলেন, সেখানে দুই বছর আগে ওয়াদা করেছিলেন, ঈদগাহ মাঠে একটা মাদ্রাসা দরকার। দুই মাস পরে তাদেরকে ডাইকা আইনা কোটেশন নিয়ে নিছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাকা দেন নাই। প্রতিবছর শুধু দেড় কোটি টাকার সই নিছেন।
 
রুহুল আমিন মাদানীর আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে আনিস বলেন, প্রতিবছর (রুহুল আমিন মাদানী) শুধু দেড় কোটি টাকার সই নিছেন। আজকে এই টাকা দিয়ে, এক পঞ্চাশ কোটি টাকা দিয়ে ত্রিশালের মনোনয়ন আনছে। এক পঞ্চাশ কোটি টাকা, চিন্তাও করতে পারবেন না, কি হয়েছে বাংলাদেশ। ত্রিশাল নিয়ে আনিস বলেন, আজকের ত্রিশাল, আপনার- আমার ত্রিশাল, আমাদের লজ্জা ত্রিশালে কোন কাজ নাই, উন্নয়ন নাই, আপনার সন্তানের চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাবেন, আপনি যান, একটি ডিও লেটার যদি আনতে পারেন টাকা ছাড়া, তাহলে আমি নির্বাচন করব না, আজকেই সরে দাঁড়াবো। রুহুল আমিন মাদানীর ভাতিজাকে নিয়ে আনিস বলেন, তার ভাতিজা (ড. ইদ্রিস খান) জামাত করতো, বাড়ি হলো দিনাজপুর, সে ময়মনসিংহের একটি মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট, সে ত্রিশালের ১৭ টি মাদ্রাসার একাই সভাপতি। সাবেক মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামান আনিসের বিতর্কিত মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ইদ্রিস খান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী একজন ৪ টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারে, সেখানে আনিস আমাকে ১৭ টি মাদ্রাসার সভাপতি বলা তার অজ্ঞতা। আমি আশির দশক থেকেই ৭ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ময়মনসিংহের বাসিন্দা, এখানকার ভোটার এবং এখান থেকেই মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি। নিয়ম অনুযায়ী আমি মাত্র ২টি প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আমি কোনদিনও জামাতের সাথে জড়িত বা কোন সমাজতন্ত্রের সাথে ছাত্রজীবন পর্যন্ত জড়িত ছিলাম না। আনিস যেটা বলেছে, সেটা সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি জামাত এন্টি সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদার্রেছীন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আনিস আমাকে জামাত বলা সম্পূর্ন মিথ্যাচার ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আওয়ামীলীগের নেতা বলেন, আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীকে নিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের একজন সদস্যের এমন বিরূপ মন্তব্য করা দলীয় সৃঙ্খলা ভঙ্গের সামিল। এতে করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষূন্ন হয়েছে।
 
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম বলেন, আনিস যে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলে, সে কিভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হল, সে আবার আরেকজনকে দোষ দেয়, সে যা বলেছে তা দলের জন্য মানহানিকর। আমি অচিরেই সকলকেই মেসেজ পাঠাবো, নৌকার দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতস্ত্র প্রার্থীরা কোন ধরণের উল্টাপাল্টা অভিযোগ ও কথাবার্তা বলতে পারবে না। তাছাড়াও আমাদের দলীয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন বিতর্কিত মন্তব্য করতে পারবে না। যদি কেউ দলের সৃঙ্খলা ভঙ্গ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবে। নিজ দলের প্রার্থীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের বিষয়ে জানতে ত্রিশাল-০৭ আসনের স্বতস্ত্র প্রার্থী ও সাবেক পৌর মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামান আনিসের মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
 
উল্লেখ্য, ত্রিশাল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও বর্তমান স্বতস্ত্র প্রার্থী এ বি এম আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভুত কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই অংশ হিসেবে সাবেক মেয়রের সম্পদ বিবরণীও তলব করে দুদক। পরবর্তীতে নিজের স্থাবর, অস্থাবর সম্পদের বিবরণী জমা দেন এ বি এম আনিসুজ্জামান আনিস। সম্পদ বিবরণীতে ত্রিশালে নিজের বাড়ি-গাড়ি, কৃষি জমি, দোকান-পুকুরসহ প্রায় ৫ কোটি টাকার সম্পদের বিবরণ দেন তিনি। দুদক সূত্র জানায়, এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনে ত্রিশাল পৌরসভার এই মেয়রের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো: মামুন অর রশিদ। ওই অভিযোগে জানা যায়, মেয়র আনিস অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি খাস জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেন, সুতিয়া নদী দখলের সহায়ক হয়ে রায়মনি আকিজ কোম্পানির ভুমির জাল দলিলে সহযোগিতা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ময়মনসিংহ নগরীর জিলা স্কুল মোড়ে দশতলা বিলাসবহুল মেয়র টাওয়ার নির্মাণ করেছেন। ত্রিশালের চেলেরঘাটে ৮ একর জমির ওপর গড়ে তুলেছেন পেপার মিল। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নামে-বেনামে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ২০ একর জমি। নিজ নামে রয়েছে প্রায় ১০টি ট্রাক ও বিলাসবহুল গাড়ি। পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকান্ড নয়ছয় করে ঠিকাদারের যোগসাজসে হাতিয়ে নিয়েছেন আরো প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এছাড়াও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বর্হিভুতভাবে অর্জন করেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। গত বছর আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তৃতীয়বারের মতো ত্রিশালের পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এবিএম আনিসুজ্জামান। ২০১৬ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এক যুবলীগ নেতা হত্যা মামলায় তাকে আসামি করে মামলাও করা হয়েছিল।


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


  1. জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তির দাবিতে শেরপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ
    জামায়াত নেতা আজহারুলের মুক্তির দাবিতে শেরপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ
  1. শেরপুরে হরতাল পালন ও রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করেছে ছাত্রলীগ
    শেরপুরে হরতাল পালন ও রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করেছে ছাত্রলীগ
  1. শেরপুরে বিএনপি নেতা মাসুদের বিরুদ্ধে প্রকাশিত মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদের প্রতিবাদ
    শেরপুরে বিএনপি নেতা মাসুদের বিরুদ্ধে প্রকাশিত মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদের প্রতিবাদ
  1. শেরপুরে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের স্মারকলিপি প্রদান
    শেরপুরে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের স্মারকলিপি প্রদান
  1. শেখ হাসিনার আসন্ন 'ভার্চুয়াল বৈঠক' ঘিরে আওয়ামী লীগে কী চলছে
    শেখ হাসিনার আসন্ন 'ভার্চুয়াল বৈঠক' ঘিরে আওয়ামী লীগে কী চলছে
  1. শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে হত্যা মামলার আসামি ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ২
    শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে হত্যা মামলার আসামি ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার ২
  1. মার্চ ফর ইউনিটি : শহীদ মিনারে সমাবেশ শুরু
    মার্চ ফর ইউনিটি : শহীদ মিনারে সমাবেশ শুরু
  1. ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি নেতা মাসুদ
    ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি নেতা মাসুদ
  1. শেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে কফি চাষ
    শেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে কফি চাষ
  1. সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার মারা গেছেন
    সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার মারা গেছেন
জনপ্রিয় খবর