সাঁথিয়ার শুঁটকির গন্ধ ছড়াচ্ছে বিদেশ

রফিকুল ইসলাম সান, সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি | ২২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৪৬

সাঁথিয়ার শুঁটকির গন্ধ ছড়াচ্ছে বিদেশ

সাঁথিয়ার জলাভূমি গুলোতে এখন আর থই থই পানি নেই। প্রায় চারদিকে শুঁকিয়ে গেছে।ফলে বিস্তীর্ণ মাঠ ও জলাশয় গুলোতে শুরু হয়েছে মাছ ধরার মহোৎসব।সোঁতি জাল,খোঁড়া জাল,বেড় জাল ও পলো দিয়ে মাছ শিকার করছেন জেলেরা,বাদ যাচ্ছেন না মৌসুমী জেলেরাও।

মিঠা পানির মাছ গুলো শুঁটকি করার জন্য পাশেই বসানো হয়েছে অস্থায়ী বাঁশের চাতাল।সেখানে মিঠা পানির বিভিন্ন ধরনের মাছের শুটকি উৎপাদিত হচ্ছে। শীত মৌসুমের শুরুতেই মাছের সংকট কাটিয়ে শুঁটকি পল্লিগুলো কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে। ফলে এই এলাকার মৎজিবী পরিবার গুলোর দম ফেলার ফুসরত নেই।উপজেলায় শুঁটকি খোলার আশপাশে শুঁটকি মাছের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে। প্রতিদিন জেলেরা মাছ এনে এসব শুঁটকি খোলায় মাছ বিক্রি করছেন। আর তাই শুঁটকি খোলা এখন শুঁটকি শ্রমিকদের কাজে সরগম হয়ে উঠেছে।

শীতের শুরুতেই আশপাশের নদী ও বিলগুলোতে পানি কমে যাওয়ায় জেলেদের জালে প্রতিদিন প্রচুর দেশী মাছ ধরা পড়ছে।এসব মাছ বাজারে বিক্রি করার পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে শুঁটকির খোলা গুলোতেও।

সাঁথিয়া উপজেলায় উৎপাদিত শুঁটকি মাছগুলোর কদর রয়েছে সাড়াদেশেই।এখানকার উৎপাদিত শুঁটকি মাছ গুলো সরাসরি চলে যাচ্ছে নীলফামারী,সৈয়দপুর ও ঢাকায়। সেখান থেকে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে। এ উপজেলা থেকে উৎপাদিত শুটকির মধ্যে রয়েছে পুঁটি,টাকি,চ্যাং,শৈল, ছোট বোয়াল,টেংরা,গচি বাইন,নয়না(ভেদা),খৈলশাসহ সব রকমের দেশি মাছ।এসব শুঁটকির কাজে বিশেষ করে মাছ বাছায়ের কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা কাজ করছেন।

সরেজমিনে উপজেলার ভীটাপাড়া এলাকার শুঁটকি মাছের খোলায় গিয়ে কথা হয় শুঁটকি শ্রমিক শুমিত্রা দাসের সাথে তিনি বলেন,এ কাজের জন্য সপ্তাহে তাকে ১০৫০ টাকা মুজুরি দেওয়া হয়।এ কাজ করে কিছুটা হলেও তার সংসারে সচ্ছলতা এসেছে।

শুঁটকি শ্রমিক মিনতী রাণী দাস জানান,নিত্যপণ্যের যে দাম তার স্বামী একা কাজ করে সংসার চালাতে পারে না।তাই সংসার চালাতে স্বামীকে সাহায্য করতে প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত শুঁটকির খোলায় কাজ করেন। প্রতিদিন তার মুজুরি ১৫০ টাকা।এ টাকা জমিয়ে স্বামীকে দেবেন সংসারে খরচ করার জন্য। সংসার খরচে স্বামীকে সাহায্য করতে পেরে তিনি অনেক খুশি।

শুটকি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায় , গত বছর শুঁটকি ব্যবসায় ভালো লাভ হওয়ায় এ বছর গত বছরের চেয়ে বেশী শুঁটকি করছেন তারা। উপজেলায় ছোট বড় বেশ কয়েকটি শুঁটকির খোলা রয়েছে। প্রতিটি খোলায় নারী-পুরুষ সমান ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

উপজেলার ভীটাপাড়া শুঁটকি ব্যবসায়ী মোঃ ফজর আলী প্রাঃ জানান,তার খোলায় প্রতিদিন প্রায় ৭ থেকে ৮ জন শ্রমিক কাজ করছেন। এ বছর মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। তার পরেও তার টারর্গেট আছে ৪০০ মণ শুঁটকি মাছ উৎপাদন করবেন। তিনি এ পর্যন্ত ১৫০ থেকে ১৬০ মণ শুঁটকি উৎপাদন করে সৈয়দপুর বিক্রি করেছেন।তারা ঢাকায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। মূলত ঢাকার ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরেই সেখান থেকে মাণ ভেদে ইন্ডিয়া,আমেরিকা,মালএশিয়া,সৌদি আরব ,দুবাই,কাতারসহ বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে।

শুঁটকির আকার ভেদে দাম হয় ভিন্ন ভিন্ন। ছোট আকারের শুঁটকি মাছের দাম হয় প্রতিমণ ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা।কিন্তু এখন দাম কম থাকায় ৪ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।আর বড় আকারের শুঁটকির দাম হয় প্রতিমণ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতিমণ ছোট কাচা মাছ শুকালে ১০ থেকে ১২ কেজি ও বড় মাছ শুকালে ১৫ থেকে ১৭ কেজি শুঁটকি মাছ পাওয়া যায়। এভাবে ছোট তাজা মাছ ৪ মণে ১ মণ হয় আর বড় মাছ ৩ মণ শুকালে ১ মণ শুটকি হয়।

তিনি আরোও বলেন, শুঁটকির ব্যবসায় যেমন লাভ আছে,তেমনি লোকসানও আছে।ভালো ভাবে মাছ না শুকালে পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ভালো মানের শুঁটকির কদর বেশী,বড় বড় ব্যবসায়ীরা এগুলো ভালো দামে কিনে বিদেশে বিক্রি করে।

উপজেলা মৎস কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম জানান,উপজেলায় বড় বড় ৩ টি শুঁটকির চাতাল রয়েছে। শুঁটকি ব্যবসায়ীদের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নমানের শুঁটকি তৈরী করার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে তাদের। জেলেরা এ বছর প্রচুর মাছ শিকার করেছে। বাজারে বিক্রির পাশাপাশি শুঁটকির খোলায়ও বিক্রি করেছে। গত বছর উপজেলায় ৬০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল,এ বছর উপজেলায় ৭০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: