অর্থ পাচারের অভিযোগ কিশোরগঞ্জের যুবকের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:৩২

প্রতীকী ছবি

আব্দুল কাইয়ূম মিয়া (৩০)। প্রায় তিন বছর ধরে বেলকি, বাঁজি ৩৬৫ ও লাকি উইনসহ বেশ কিছু অ্যাপ দিয়ে অনলানই জুয়ার সাইট পরিচালনা করে আসছেন। এরই মধ্যে এসব জুয়ার টাকায় বিপুল পরিমাণের সম্পত্তিও ক্রয় করে ফেলেছেন। দৃশ্যমান কোনো আয়ের পথ না থাকায়, এই উত্থান দেখে এলাকবাবাসী হতবাক। স্থানীয় প্রশাসনও এই অল্প সময়ের উত্থানের বিষয়টি অবগত। তাই তাদের নজরদারি এড়াতেই কাইয়ুম বর্তমানে দুবাই অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই নিজ গ্রামে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার গজারিয়া গ্রামে অনলাইন জুয়া পরিচালনাকারী একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এই সিন্ডিকেটে রয়েছে অন্তত ২০ জন যুবক। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অল্প কিছুদিনে কোটিপতি বনে গেছেন। আর কাইয়ূমের প্রধান সহকারী হিসেবে কাজ করছেন হাবিবুর রহমান বকুল ও সোহাগ নামের একজন। এই দু’জনের মাধ্যমে প্রতিদিন কাইয়ূমের কাছে ৪০-৫০ লাাখ টাকা দুবাই পাচার হচ্ছে জানা গেছে। সরেজমিন অনুসন্ধান, এলাকাবাসী ও কাইয়ুমসহ তার সহযোগী যুবকদের নিকটাত্মীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

জানা যায়, আড়াই বছর আগেও কাইয়ুমের পরিবারে আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। তিনি একটা কম্পানিতে অল্প বেতনে চাকারি করতেন। সে সময় অনলাইন জুয়ার বেটিং সাইট চালানো শুরু করেন। এরপর অল্প সময়ে বিপুল টাকার মালিক বনে যান। চাকরি ছেড়ে গ্রামে এসে ৮-১০ জনকে দিয়ে বিকাশের এজেন্ট নেওয়ায় এবং তাদের জুয়ার সিন্ডিকেট অন্তর্ভুক্ত করেন। সে যুবক এখন স্বপরিবারে দুবাই থাকেন। সেখান থেকেই তিনি অনলাইন জুয়া পরিচালনা সংক্রান্ত সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন ।

রাতারাতি করেন ডুপ্লেক্স বাড়িসহ অন্যান্য সম্পত্তি:
জুয়া খেলায় জড়ানোর এক বছরের মধ্যে গ্রামের বাড়ি গজারিয়ায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আধুনিক ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন। সম্প্রতি প্রায় আড়াইকেটি টাকা দিযে একজনের কাছ থেকে বিশাল পুকুরসহ একটি ফার্ম কিনে নেন। তার ব্যাবসায়ীক অংশীদার বলে পরিচিত হাবিবুর রহমান বকুল সেখানে বর্তমানে মৎস চাষ করছেন। তার রয়েছে আরো একাধিক ব্যবসা। এসব জুয়ায় টাকা দিয়ে রাতারাতি সম্পত্তি কেনা ও ব্যবসা দেওয়ায় এলাকাবাসী অবাক হতে থাকেন।

এলাকাবাসী জানান, কাইয়ুমসহ তার সহযোগীরা অনলাইনে জুয়া সরাসরি খেলেন না। তারা পরিচালনা করেন। তারা বেলকি, বাঁজি ৩৬৫ ও লাকি উইনসহ বেশ কিছু অ্যাপ দিয়ে খেলিয়ে থাকেন। এর সবকিছু দুবাই থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন মাস্টার মাইন্ড কাইয়ূম। তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে কাইয়ূম স্বপরিবারে দুবাই থাকেন।

এলাকাবাসীর ধারণা কাইযূম এখন শত কোটি টাকার মালিক। তার দুবাই থাকার মূল কারণ নিরাপত্তা। কাইয়ূমের একাধিক ঘনিষ্টজন জানিয়েছে, এভাবে অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ায়, স্থানীয় প্রশাসনসহ এলাকাবাসী সকলে হতবাক । যেকোন সময় আইনি ঝামেলায় পড়তে পারেন, এজন্য নিরাপত্তা জন্যই দুবাই চলে যান। গত জুলাই মাসে দেশে বেড়াতে এসে মাদকসহ কটিয়াদি থানা পুলিশের কাছে কাইয়ূম তার সহযোগী ছয়জন গ্রেপ্তার হন। ৬ দিন জেলে থাকার পর ছাড়া পেয়ে দ্রত আবার দুবাই পাড়ি জমান।

কাইয়ুমের সিন্ডিকেটে যাঁরা:
অনন্ত ২০ জন যুবক গজারিয়া গ্রামে কাইয়ূমের সিন্ডিকেটে কাজ করেন। তাদের কাছে নামে বেনামে ৩০ টির বেশি বিকাশ এজেন্ট সিম রয়েছে। এগুলো থেকে প্রতিদিন বিপূল অঙ্কের টাকা কাইয়ূমের কাছে পাঠানো হয়। দেশে তার প্রধান সহকারী হিসেবে জুয়া ও আর্থিক লেনদেনের কাজকর্ম পরিচালনা করে সোহাগ মিয়া। তার পিতা একজন দিনমজুর, তিনিও বর্তমানে কোটি টাকার মালিক বনে গেছে, কটিয়াদি বাজারে প্রায় কোটি টাকার বিনিয়োগ কাপড়ের শোরুম করেছেন। সোহাগের ভাই খাশালা গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি হুমায়ুন কবিরও তাদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

এ ছাড়া কাইয়ুম মিয়ার ব্যাবসায়ীক অংশীদার হিসেবে পরিচিত হাবিবুর রহমান বকুল এলাকাতে বিপুল অঙ্কের টাকার সম্পদসহ একাধিক ব্যাবসা পরিচালনা করছেন। যা মুলত কাইয়ুম মিয়ার অর্থায়নে। হাবিবুর রহমান বকুলের মাধ্যমে কাইয়ূম বর্তমানে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
এালাকাবাসী বলছে, লাকি উইন নামের অনলাইন সাইটটির মালিক হিসেবে রয়েছেন কাইয়ুম নিজেই। এলাকাবাসীর ধারণা এই সাইটটিতে যারা অর্থ বিনিয়োগ করছে তা কাইয়ুম ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা যেকোন সময় বন্ধ করে দিতে পারে। এতে আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাবে ব্যাবহারকারীরা।

এলাকাবাসীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী কাইয়ূমের সহকারীদের মাধ্যমে প্রতিদিন আনুমানিক ৪০-৫০ লাখ টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। এসব অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পাচারের অভিযোগ রয়েছে কাইয়ুম মিয়া সিন্ডিটের বিরুদ্ধে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কাইয়ূমের প্রধান সহকারী সোহাগ অভিযোগ গুলো এড়িয়ে যান এসব বিষয়ে কথা বলতে চাননি। সকল কিছুর তদারক হাবিবুর রহমান বকুলকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি। কাইয়ূমের বাবা-মায়ের ভাষ্য,কাইয়ূম তিন ভাইসহ দুবাই থাকে। সেখানে কম্বলের ব্যবসা করে। অথচ, বিদেশ যাওয়ার আগেই বাড়িসহ অন্যান্য সম্পত্তি কেনেন।

অনলাইন জুয়ার বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির মুখপাত্র (মিডিয়া) পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান বলেন, সিআইডি বিভিন্ন সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। আমাদের এই অভিযান চলমান। সারাদেশের যেকোন জায়গায় এসব চক্রের সন্ধ্যান পেলে তাৎক্ষণিক তদন্ত সাপেক্ষ তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: