কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদি উপজেলা দুইটি নিয়ে কিশোরগঞ্জ-২ (সংসদীয় আসন ১৬৩) আসনটি গঠিত। একসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ়। ২০০১ সালের চার দলীয় জোট সরকারের সময় থেকেই এ আসনটি আওয়ামী লীগ পেয়ে আসছে। তবে এ অঞ্চলে অতীতে আওয়ামী লীগের ভেতর সম্প্রীতি থাকলেও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে এ আসনের রাজনীতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক আইজিপি(পুলিশ মহাপরিদর্শক), সচিব ও রাষ্ট্রদূত নূর মোহাম্মদ। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এলাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। দলীয় লোকদের দমন-পীড়ন, অন্য গ্রুপের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা এমনকি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় প্রত্যক্ষ মদদদাতা হিসেবে অভিযোগে উঠে আসে এ সংসদ সদস্যের নামে। এছাড়াও একাধিকবার দলীয় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের মতো করে কমিটি গঠন করেও বিতর্কের মুখে পড়েছেন সাবেক এই আমলা। এ কারণে সংগঠনের হাই কমান্ড থেকে তাকে সতর্কও করা হয়।
সাবেক পুলিশ প্রধান হওয়ায় খোদ পুলিশ ফোর্সকে ব্যবহার করে নিজ দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর দমন পীড়নের ও হামলার অভিযোগ করেছেন তৃণমূল পর্যায়ের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতাকর্মী।
কিশোরগঞ্জ-২ আসনে এমপি লীগের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ, দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর আক্রমণ ও হত্যা, প্রশাসনিক হয়রানিসহ বিভিন্ন ব্যাপারে সময় ট্রিবিউন- এর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব-
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০২১ সালে নূর মোহাম্মদ এমপির বিরুদ্ধে দলীয় নির্দেশনা অমান্যের অভিযোগ ওঠে। দলের সাংগঠনিক নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নূর মোহাম্মদ কটিয়াদি উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন। কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ও কটিয়াদি উপজেলা আওয়ামী লীগকে না জানিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির সমর্থিতদের দিয়ে কমিটি করায় সে সময় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে কটিয়াদি উপজেলা আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর অভিযোগ প্রদান করেন এবং কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নূর মোহাম্মদ এমপিকে সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য চিঠি দেয়।
এরপর, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নূর মোহাম্মদের করা সকল কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে এবং তাকে গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকতে কঠোরভাবে সতর্ক করে।
কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ কটিয়াদি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সারফুল কাদের মনিরকে ব্যবহার করে কয়েকটি ইউনিয়ন যুবলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি এগিয়ে নেন। এক্ষেত্রে কটিয়াদি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির ২১ সদস্যের মধ্যে ১৯ জনই অবগত ছিলেন না। পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জ জেলা যুবলীগের হস্তক্ষেপে এসব সম্মেলন অবৈধ ঘোষণা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ভিপি ফরিদ উদ্দীন জানান, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে অবহিত না করে নূর মহাম্মদ এমপি বেশ কিছু সংগঠন বিরোধী কাজ করেন। ফলে পরবর্তীতে তাকে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড থেকে সতর্ক করা হয়। এছাড়াও, বিগত পাঁচ বছরে পাকুন্দিয়া কটিয়াদিতে দলীয় নেতা কর্মীরা মামলা হামলার শিকার হয়েছেন। অনেকে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। অসংখ্য লোকের অঙ্গহানী ঘটেছে এমপি নূর মোহাম্মদের অনুসারীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে।
কটিয়াদি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসাইন মিলন জানান, নূর মোহাম্মদ এমপির লোকেরা এলাকায় ত্রাসের রাজ্য কায়েম করেছে। তার ব্যক্তিগত এমপি লীগের সন্ত্রাসীদের কারণে দলীয় কর্মসূচিও পালন করা যাচ্ছেনা। দল পরিচালনায় বিভিন্ন সময় এমপির অন্যায় হস্তক্ষেপের কারণে সাংগঠনিক গতিশীলতা ব্যহত হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ নূর মোহাম্মদ এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য সময় ট্রিবিউন থেকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কলটি রিসিভ করেননি।
পর্ব-১
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: