নরসিংদীর শিবপুরে আরিফা আক্তার (২৩) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে শিবপুর মডেল থানা পুলিশ। নিহতের পরিবারের অভিযোগ তাকে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার প্রচারণা চালানো হয়েছে। তবে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের দাবি, রাগ-অভিমানে দিনের বেলায় সবার অগোচরে আরিফা আত্মহত্যা করেছেন।
শনিবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে শিবপুর উপজেলার শাহপুর পাটুয়ার পাড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন বলে জানায় শিবপুর থানার পুলিশ।
নিহত আরিফা আক্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার বিষ্ণুরামপুর গ্রামের সামছু মিয়ার মেয়ে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দুপুরে খাওয়ার সময় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরিফা আক্তারকে তার স্বামী জামির হোসেন বেধড়ক মারপিট করেন। সহ্য করতে না পেরে শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের প্ররোচনায় গলায় ফাঁস দিয়ে সে আত্মহত্যা করে।
মামলার বাদিনী নিহতের বোন আছমা বেগম জানান, জামির হোসেনের সাথে আরিফার বিয়ে হয় ৪ বছর পূর্বে। তাদের সংসারে জোনায়েদ নামে (২) ও আফিফা নামে (১) বছরের ২টি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই তার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন যৌতুক দাবি করে আসছিল। সংসারের কথা চিন্তা করে আমি তার স্বামীকে ৫ লাখ টাকা দেই। কিছুদিন পরই আবার টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। টাকা এনে দিতে অস্বীকার করলে আফিফাকে তার স্বামী বেধড়ক মারধর করে। পরে বিষয়টি আমাকে জানালে আমি তার শ্বশুর ও স্বজনদের বিষয়টি জানাই। এতে সে আরও ক্ষিপ্ত হয়।
তিনি আরও জানান, আমার ছোটবোনের প্রতি কুনজর পড়ে জামিরের ভগ্নিপতি ইসমাইল মিয়ার। সে বিভিন্ন সময়ে তাকে কুপ্রস্তাব দিতো। বিষয়টি আমি জানতে পারায় তার স্বামী আরিফাকে আরও বেশি করে নির্যাতন শুরু করে।
শনিবার দিন বিকেল সাড়ে ৫টায় আরিফার ভাসুর আমাকে ফোন দিয়ে জানায় যে, আরিফা গলায় ফাঁস নিয়ে জেলা হাসপাতালে আছে। দ্রুত খবর পেয়ে সন্ধ্যায় তার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে দেখি আরিফার লাশ ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে। পরে আমি বাদী হয়ে শিবপুর থানায় আরিফার স্বামী, শ্বশুর, ভাসুর ও ভগ্নিপতিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি।
থানা সূত্রে জানা যায়, ৫ নভেম্বর (রবিবার) শিবপুর মডেল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অপরাধে ৬ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং-৪ তারিখ-৫/১১/২৩.
আসামীরা হলেন: আরিফার স্বামী জামির হোসেন (২৮), শ্বশুর বাচ্চু মিয়া (৬৫), শাশুড়ি জহুরা বেগম (৫৭), ভাসুর ইমান (৩৯) ও সোহরাব (৩৬) এবং ভগ্নিপতি ইসমাইল মিয়া (৩৬)। পরে পুলিশ জামির হোসেনকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞেসাবাদে সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: