নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক দফা দাবিতে বিএনপির ও তার সমমনা দলের ডাকা ১২০ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচিতে নরসিংদীর কোথাও অবরোধের প্রভাব পড়েনি জনজীবনে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশ এবং পরের দিন হরতালের পর গত ৩০ অক্টোবর(মঙ্গলবার) থেকে সর্বাত্মক এই অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি। রাজধানীয় নয়াপল্টনে গত ২৮ অক্টোবর (শনিবার) বিএনপির মহাসমাবেশের দিন থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে ১১০টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তবে নরসিংদী জেলা ছিল ব্যতিক্রম। মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে গণপরিবহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। পাশাপাশি দোকানপাট ছিল খোলা, অফিস আদালত চলছে পুরোদমে। রাস্তায় দেখা মিলেনি জামাত-বিএনপির কোন পিকেটারদের।
স্থানীয় বিএনপি-জামাতের দুই-একজন নেতা নাশকতার মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশ শীর্ষ নেতারা রয়েছেন আত্মগোপনে। বাকি কয়েকজনকে প্রকাশ্যে দেখা গেলেও তারা রয়েছে নিষ্ক্রিয়।
অপরদিকে বিএনপির নৈরাজ্য, আগুন সন্ত্রাস ও অবরোধের প্রতিবাদে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সদর-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো (বীর প্রতীক) দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্হানে ও মহাসড়কের পাশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এসময় তিনি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে মাধবদী ও সাহেপ্রতাব মোড়ে অবস্থান নেন এবং ভেলানগর বাসস্ট্যান্ডে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো এমপি প্রতিনিধিকে বলেন, বিএনপির ডাকা অবৈধ অবরোধ জনগন প্রত্যাখান করেছেন। বিএনপি-জামাত অবরোধের নামে নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। একটি মৃত্যু একটি পরিবারের সারাজীবনের কান্না। তারা সংবিধান মানতে চায় না। তারা কি চায়, তা জনগন বুঝে গেছেন। তাই তাদের অবৈধ অবরোধকে জনগন প্রত্যাখান করেছেন। সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নে ঈষাণিত হয়ে শেখ হাসিনা সরকারে উৎখাত করতে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে তারা। শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের একজন সৈনিক হিসেবে স্বাধীনতা বিরোধীদের কাছে মাথানত করবো না। তাদের অগণতান্ত্রিক আচরণ বাংলার জনগন কখনও মেনে নিবে না।
জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। মহাসড়ক ও আশপাশের সড়ক এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্হাপনাগুলোকে নিরাপদ রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এ বিষয়ে নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া জানান, বিএনপির ডাকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ১২০ ঘন্টার অবরোধ শেষ হয়েছে। তাদের এই কর্মসূচিতে নরসিংদীতে কোন প্রভাব পড়েনি। জেলা পুলিশের দৃঢ়তায় নরসিংদীতে কোন বিশৃঙ্খলা ঘটনা ঘটেনি। সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান (পিপিএম) এর নির্দেশনায় জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশের ভূমিকা ছিল সক্রিয়।
তিনি আরও জানান, দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচিতে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও দেশব্যাপী আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তার জন্য নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশের পাশাপাশি ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করেছে সরকার।
এদিকে ১২০ ঘন্টার অবরোধ শেষ হতে না হতেই এর মধ্যেই দলটি তৃতীয় দফা অবরোধের ডাক দিয়েছেন। এবার এক দিন বিরতি দিয়ে আগামী বুধবার ভোর ৬টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী অবরোধের ঘোষণা দেয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। একই কর্মসূচির ঘোষণা দেয় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীর বিক্রম)।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: