রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়ে নরসিংদীর এক সময়ের শহর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি এখন অর্ধশত কোটি টাকার মালিক। ইকনোমিক ক্লাসে ঘনঘন বিদেশ ভ্রমণ, বিলাসবহুল বাড়ী এবং অসংখ্য প্লট। চলেন দামি গাড়ি দিয়ে। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে অল্পসময়ে এত বিশাল বিত্ত-বৈভব ও অর্থ-সম্পদের মালিক বনে যাওয়া ওই গুণধর ব্যক্তি হলেন নরসিংদী শহরের পূর্ব ব্রাহ্মন্দী এলাকার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন আহমেদ রিগান। আলোচিত গ্যালাক্সি রেস্টুরেন্টের কল্যাণে মালিক হয়ে আলাদিনের চেরাগ পাওয়া বিস্ময়কর উত্থানে এলাকাবাসীর মাঝে নানা প্রশ্নের জন্ম নিলেও তিনি রয়ে গেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের দৃষ্টির আড়ালেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ রিগান কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের ব্যস্ততম ডিসি রোডে একে একে গড়ে তুলেছেন গ্যালাক্সি রেস্টুরেন্ট, গ্যালাক্সি পার্টি সেন্টার, স্কাই লাউঞ্জ ও বানিয়াছল (খালপাড়) এলাকায় চুইঝাল নামক অভিজাত রেস্তোরাঁ। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক নামে এজেন্ট ব্যাংকিং। পাশাপাশি দুই কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশের প্রথম সারির খানদানী নামক বিলাসবহুল সেলুন। এছাড়াও রয়েছে খানদানি প্রজেক্ট নামে বিভিন্ন প্রকল্প। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি একাই। কয়েক বছর পূর্বে রেস্তোরাঁর মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ছিল ১৫℅। পরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল এসি- ননএসি সহ সবধরনের রেস্তোরাঁর ভ্যাট ১৫% কমিয়ে ৫% নিয়ে আসেন। সরকার ভ্যাট নির্ধারণ বাধ্যতামূলক করলেও তা কর্নপাত করেননি গ্যালাক্সি সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিক নাছির উদ্দিন আহমেদ রিগান। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত বিন-০০৩৭৮২৪০৪-০৩০৬ হওয়া সত্ত্বেও সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে গ্যালাক্সি সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এভাবে প্রতিবছর পকেটে ভরছেন কয়েক কোটি টাকা।
সরজমিনে দেখা যায়, গ্যালাক্সি রেস্তোরাঁয় খাবার শেষে বিল দিতে গেলে তারা তাদের নিজস্ব মেমোতে বিল আদায় করছেন। মূসক বা ভ্যাট চালানের মাধ্যমে বিল আদায় করছেন কি-না? জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মিঠু কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে কাস্টমস ও ভ্যাট অফিসে যোগাযোগ করলে এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেক ভোক্তাকে মূসক বা ভ্যাট চালান দিতে বাধ্য। সেজন্য আমরা ভ্যাট চালান সহজতর করার জন্য ইএফডি মেশিন দিয়েছি। যদি তারা অনিয়ম করে থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্হা নিবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, সাধারণ পরিবারের সন্তান রিগান। একজন শিক্ষকের ছেলে ও ছাত্রশিবিরের সভাপতি। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী হয়ে, সে বিজনেস ক্লাসে ঘনঘন বিদেশ ভ্রমণ করে বেড়ায়। সাধারণ ব্যবসার আড়ালে রাতারাতি এত সম্পদ ও টাকার মালিক হলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দৃষ্টির আড়ালে রয়ে গেছেন। তার সম্পদ ও টাকা অর্জনের উৎসের হিসেব চাইলে বেড়িয়ে আসবে থলের বিড়াল। তাই দুদকের অনুসন্ধান প্রত্যাশা করছেন সচেতন মহল।
কে এই নাছির উদ্দিন আহমেদ রিগান? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নরসিংদী শহরের একসময়ে ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ছিলেন নাছির উদ্দিন আহমেদ রিগান। বর্তমানে জামায়াতের সক্রিয় সদস্য। বাবা সাহাব উদ্দিন আহমেদ হাজী আবুল হাসেম উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক। চলতি বছরের ৫ মে অবসর গ্রহন করেন তিনি। পৈতৃক বাড়ি রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নে। চাকরির সুবাদে তিনি শ্বশুর বাড়ি শহরের পূর্ব ব্রাহ্মন্দী এলাকাতে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। পাশেই ৪ শতাংশ জায়গা কিনে সদ্য নির্মিত বিলাসবহুল তিনতলা বাড়িতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি। ২ ছেলে ১ মেয়ে তার। ছোট ছেলে নাসির উদ্দিন আহমেদ রিগান (৩২)। সে ২০০৮ সালে স্থানীয় আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। তারপর ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলে গা ডাকা দেন। বহুদিন পলাতক থাকার পর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নামে বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ্যে আসেন তিনি। সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইকোনমিক ক্লাসে ঘনঘন বিদেশ ভ্রমণের নামে বিভিন্ন দেশে বসবাসরত জামাত অনুসারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা ছিল তার মূল কাজ। এসব অর্থ জামাতের সাংগঠনিক এবং নাশকতার কাজে ব্যয় করা হতো। সম্প্রতি, তিনি নরসিংদী মডেল থানায় দায়েরকৃত নাশকতার মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন জেলও খাটেন বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে জানতে রিগানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ ও তার ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কোনো সাড়া দেননি।
এই বিভাগের অন্যান্য খবর
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: